চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোটি টাকা নিয়ে উধাও জেলার টপ প্রতারক মাসুদ ও ইরানি খাতুন।
মোমিনুল ইসলাম মোমিন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
গৃহবধূ সায়েমা খাতুনের মা আদিনা বেগম ৪ বছর গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সৌদি আরবে। দেশে ফিরে সব উপার্জনের টাকা রেখেছিলেন ব্যাংকে। কিন্তু মেয়ে সায়েমা খাতুন মায়ের ৬ লাখ টাকা নিয়ে জামানত রাখেন সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি ভুয়া এনজিও-তে। গত ১ বছর ধরে টাকা ফেরত চাইলেও ফেরত না দিয়ে নানারকম টালবাহানা শুরু করে এনজিও’র দুই মালিক জেলা শহরের চিহ্নিত প্রতারক ইরানী খাতুন ও মাসুদ।
প্রবাসী ছেলের উপার্জনের ১৩ লাখ টাকা জমা ছিল আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখায়। মাসে ১৩৫০ টাকা লাভের আশায় এবং সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থার মালিক ইরানী খাতুন ও মাসুদ রানার প্রলোভনে পড়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে জমা রাখেন এনজিও-তে। গত কয়েকমাস আগে থেকে এনজিওর মালিক উধাও হলে উপায় না পেয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বেবী বেগম। আত্মীয় স্বজনদের বলছেন,আমি বেঁচে থাকতে ছেলেকে এসব বলতে পারব না। টাকা না পেলে আমি আত্মহত্যা করবএটাই আমার সিদ্ধান্ত,আমার ছেলেকে টাকার কথা বললে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবে। তাই আমি মারা যাবার পর তাকে এই খবর দিও তোমরা আমার দুঃখিনী পরিবার।
এক লাখ টাকা জামানত রাখলে মাসে লাভ দেয়া হবে ১৩৫০ টাকা। যখন ইচ্ছে চাইলেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। ৭ বছর মেয়াদে টাকা রাখলে পাওয়া যাবে জামানতের দ্বিগুন টাকা। এমন লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় কয়েকশ গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে অনিবন্ধিত ও অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণদানকারী ভুয়া এনজিও’র দুই মালিক। জামানতের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এনজিওর কর্মীরা। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে জেলা শহরের শান্তিমোড়স্থ এক গ্রাহকের বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা শহরের সোনারমোড় এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে বেবী বেগম বলেন, আমার ছেলে এখনও এনজিওতে টাকা রাখার বিষয়টি জানে না। আমি তাকে বলতেও পারব না। এনজিও’র মালিকদের দুইজনই পালিয়েছে। কোথায় যাব,কার যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। চোখের পানি ফেলা ছাড়া কোন উপায় নাই। পরিবারের লোকজনকে বলেছি,আমি মারা যাবার পর ছেলেকে এনজিও-তে টাকা রাখার কথা বলিও। তার আগে জানলে ছেলে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবে কারণ তার সারা জীবনের সঞ্চয় প্রবাসীর কষ্টের জমানো টাকা।
চুনারীপাড়া মহল্লার আসলাম আলীর স্ত্রী পলি বেগম বলেন,স্বামীর অনেক কষ্টে জমানো টাকাগুলো এনজিও-তে জমা নেয়ার জন্য বাসায় অনেকবার এসেছিল সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থার মালিক ইরানী খাতুন ও মাসুদ রানা। টাকা নেয়ার সময় বলেছিল, যখন আপনাদের প্রয়োজন হবে, টাকা পেয়ে যাবেন। এখন গত ৮-৯ মাস থেকে টাকা চাইলেও বিভিন্ন অযুহাতে দিব দিছি বলে ঘুরাচ্ছে। তারা দুইজনই পালিয়েছে। এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
এনজিও-র মাঠকর্মী ফাতেমা বেগম বলেন,আমাকে দিয়ে গ্রাহকদের টাকা আদায় করেছে। তারা পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা আমার উপর চাপ দিচ্ছি। আমার নিজেরও ৫০ হাজার টাকা জামানত ও ৮০ হাজার টাকা বেতন বাবদ পাওনা রয়েছে। অথচ তারা দুইজন এসব টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জমি ও বাড়ি ক্রয় করেছে।এমনকি আমার পায়ের নুপুর পর্যন্ত তারা বেঁচে অফিস চালিয়েছে,আমার বেতন তো দূরের কথা কোনটাই পাইনি,প্রশাসনের নিকট দাবি,তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের ও আমার ডিভোর্সের টাকা তাদের হাতে জামানতের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবে জেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন,ভুক্তভোগী গ্রাহক লতা বেগম, আসলাম আলী,ইশরাত জাহানসহ অন্যান্যরা৷ এবিষয়ে সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থার দুই মালিক ইরানী খাতুন ও মাসুদ রানার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি বাড়িতে গিয়েও তাদেরকে পাওয়া যায়নি সাংবাদিকরা বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনতে পাই চিহ্নিত প্রতারক মাসুদ পরে লোক মারফতে প্রাণ নাসের হুমকি প্রদান করে প্রতিবেদক সাংবাদিক এস এম রুবেল সহ তার সহকর্মীদের।
এনজিও মালিক ইরানী খাতুনের ছেলে মুঠোফোনে লুৎফর রহমান ইমু বলেন,মাসুদ রানা ও আমার মায়ের যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থা। আমার জানা মতে,জনগণের প্রায় ৪০ লাখ টাকা জামানত রয়েছে এবং ৩০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা আছে। কিন্তু অজানা কারনে মাসখানেক আগে থেকে আমার মা নিখোঁজ রয়েছে। মাকে সন্ধান করার পর মাসুদ রানা ও গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এর সমাধান করতে উদ্যোগ নিব। তবে মা হারানোর ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে কি না,এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি ঢাকায় কর্মরত চাকরিজীবী ছেলে।
জানা যায়,সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন রয়েছে সজাগ দারিদ্র্য উন্নয়ন সংস্থার। এবিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসা. উম্মে কুলসুম জানান,এই এনজিও-টি সম্ভবত আমাদের নিবন্ধিত নয়। তবে আমাদের নিবন্ধন নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না। আমরা শুধুমাত্র সমাজসেবামূলক কাজের জন্য নিবন্ধন দিয়ে থাকি। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বা এমআরএ’র নিবন্ধন ছাড়া ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ৷
উল্লেখ্য,জেলা শহরের কয়েকটি জায়গায় গ্রাহকের টাকা নিয়ে চিহ্নিত প্রতারক ইরানি খাতুন ও মাসুদ তাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক ব্যালেন্স সহ জায়গা জমি কিনে রেখে মালিক সেজে রয়েছে,চলছে তাদের প্রতিদিনের রমরমা দিনকাল গাড়ি বাড়ি আলিশান ভাবে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে গোপনে চলাফেরার মাত্রা ছেড়েই যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনের গ্রাহক ও ভুক্তভোগী অবিলম্বে চিহ্নিত প্রতারক ইরানি খাতুন ও মাসুদকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সমাধানের প্রতিশ্রুতির আশা ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরে নিকট সেই সাথে এখনই এদেরকে আইনের আওতায় না আনলে তাদের হাতে প্রতিনিয়ত প্রতারণা শিকার দিন দিন বেড়েই যেতে থাকবে।