চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা আগের মত লালদীঘির মাঠেই হবে।
মাসুদ পারভেজ
রোববার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাক্ষাত শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, “আমরা উপমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, বলী খেলা যেন লালদীঘির মাঠেই হয়। তবে মাঠের ছয় দফা মঞ্চ যেন উন্মুক্ত থাকে।
“সে হিসেবে আমরা বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলী খেলার মঞ্চ (রিং) তৈরি করব। ২৫ এপ্রিল মাঠের রিংয়ে বলী খেলা হবে। ২৬ এপ্রিল চাঁটগাইয়া ঈদ উৎসব হবে। এ দুদিনের জন্য মাঠ বরাদ্দ নেওয়ার আবেদন করব। ছয় দফা মঞ্চ উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে কিছু করা হবে না। মেলা হবে মাঠের বাইরে। পরবর্তীতে রিং তৈরির জন্য মাঠে যে গর্ত হবে, সেগুলো ভরাট করে দিব।”
এর আগে ৫ এপ্রিল আয়োজক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২২ সালের মত লালদীঘি মাঠ সংলগ্ন মাহবুব উল আলম চৌধুরী সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরির সামনের চত্বরে সড়কের উপর মঞ্চ তৈরি করে বলী খেলা হবে।
তার আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড সংক্রমণের কারণে জব্বারের বলী খেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। সে হিসেবে তিন বছর পর আগের মতো লালদীঘির মাঠে ফিরছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা।
জব্বারের বলী খেলা ফিরছে লালদীঘি মাঠে
লালদীঘি মাঠে ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার টেরাকোটা ও মাঠ সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন গত বছরের ডিসেম্বরে।
ওই প্রকল্পটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকার কারণে লালদীঘি মাঠ বরাদ্দ না মেলায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল আয়োজক কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
বলী খেলা ও মেলা স্থগিতের ওই ঘোষণা আসার পর তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয় এবং চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন অব্যাহত রাখার দাবি ওঠে। পরে একপর্যায়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে খেলা ও মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন।
তবে গত বছর বলী খেলা মাঠে হয়নি, হয়েছিল মাঠ সংলগ্ন সড়কের উপর তৈরি মঞ্চে। এবারও শুরুতে আয়োজকরা জানান, মেলা বসবে লালদীঘি মাঠের চারপাশ ঘিরে, আর মাঠ লাগোয়া পাবলিক লাইব্রেরির সামনের সড়কে মঞ্চ বানিয়ে হবে প্রতিযোগিতা।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসর বসছে এবার ২৫ এপ্রিল। আর খেলাকে ঘিরে বৈশাখী মেলা হবে ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিনদিন।
গত বছরের মত এবারও সিটি মেয়র রেজাউল বলী খেলা ও মেলা ব্যবস্থাপনায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে জানান কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদিঘী মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। পরে যা আব্দুল জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়। এর জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদিঘীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলা। খেলার আগের দিন থেকে শুরু করে পরদিন পর্যন্ত তিন ধরে লালদিঘীর মাঠ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা।