পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় ব্যাপক হারে সরিষার আবাদ, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষের নয়ানাবিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, কৃষকের মুখে হাসি।
বুধবার (৩ জানুয়ারি ) দিনব্যাপী পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি , হেমায়েতপুর, আতাইকুলা, গয়েশপুর, চরতারাপুর, ভাঁড়ারা, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষের নয়ানাবিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় সরেজমিনে আমাদের সাথে কথা হয়েছে ভাড়ারা গ্রামের সরিষা চাষি মজিবর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার কম খরচে অনেক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেন তিনি। তবে এবার ৬বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সরিষার উচ্চ ফলন হয়েছে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়েও ৮৫-৯৫হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এই কৃষক বলেন, এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় উপজেলার সকল চাষিদের সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। এ জন্য নতুন যারা সরিষা চাষ করেছেন এমন কৃষক পরিবারের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ দেখা যাচ্ছে।
মাঠের পর মাঠ চোখ ধাঁধানো হলুদ ফুলের সমাহার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এমন সৌন্দর্য শোভা পাচ্ছে।
গয়েশপুর গ্রামের কৃষক আল- আমিন জানিয়েছেন, খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় দিন-দিন পুরাতন চাষিদের পাশাপাশি নতুন কৃষকদের সরিষা চাষাবাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ ও বারি-১৫ ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে।
পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় অর্ধশতাধিক এলাকার কৃষকরা সরেজমিনে আমাদের জানিয়েছেন, তাদের ধান চাষের পরেই যে ফসল চাষাবাদ করা হয়। সেই ফসলের নামই সরিষার চাষ। এজন্য উপজেলার বিভিন্ন মাঠে চাষ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি-১৫। গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়।
শানিকদিয়ার গ্রামের সরিষাচাষি আব্দুল রহমান জানান, পাবনা সদর উপজেলায় একটা সময়ে সরিষা চাষাবাদে কৃষকদের তেমন কোন আগ্রহ ছিলোনা। তবে যখন কৃষকরা সরিষা চাষ করেই বুঝতে পারলো কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জিত হয়। তখন থেকেই এই সরিষা চাষাবাদের কৃষকদের আগ্রহ বাড়তে শুরু হয়। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না
সুজানগর উপজেলার কৃষক মান্নান মন্ডল বলেন, সরিষা চাষাবাদে প্রথম দিকে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে তারা যখন দেখলেন। স্বল্প খবর দিয়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করা যায়। এর পর থেকেই তারা সরিষা চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলার অনেক নতুন কৃষকরাও সরিষা চাষাবাদ শুরু করেছে।
তিনি বলেন,উন্নত জাত যেমন বারি-১৪, বারি-১৫ জাতের সরিষার চাষ করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস ও কৃষকদের সূত্রে জানা যায়, সাধারণত বছরের নভেম্বর মাসে সরিষার বীজ বোপন করা হয়। জাত ভেদে বোপন করা থেকে ৭০ হতে ১২০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়।
উত্তরবঙ্গের মৌ চাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হিসাব অনুসারে এ বছর পাবনা থেকে ১০০ টন মধু আহরণ করা সম্ভব হবে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন এবারের নয়টি উপজেলায় ৩৫ হাজার মৌ মাছির মধু সংগ্রহকারী মৌ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে।
দেশের বৃহত্তম চলনবিলে ব্যাপক সরিষা আবাদ সম্পর্কে কৃষকরা বলেন, বর্ষার পানি আগাম নেমে যাওয়ার ফলে বোরো আবাদ দেরিতে শুরু হয়। তাই তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শে স্বল্প সময় ও অল্প খরচে সরিষা আবাদ বেছে নেন। খরচ কম ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় বির্স্তীর্ণ বিল এলাকার কৃষকরা আগ্রহ নিয়ে সরিষা চাষ করেছেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় এই বছর ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, সরিষা উৎপাদন কত বছরের চেয়ে বেশি হবে। জেলায় প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।