মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের ৮৬ কিলোমিটারেরই কাজ শেষ। কিন্তু খুলনার মোস্তর মোড় থেকে লতা এলাকা পর্যন্ত মাত্র চার কিলোমিটার এলাকায় লাইন স্থাপনের কাজ থেমে আছে। এই চার কিলোমিটার এলাকায় রেললাইন স্থাপনের মাটির বেড কোথাও ছয় ইঞ্চি আবার কোথাও এক ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে। এখন বেড উঁচু করার কাজ চলছে। নির্ধারিত সময় আগামী অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ০৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সরেজমিন মোস্তর মোড় থেকে লতা এলাকার দিকে রেললাইনের ওপর দিয়ে কিছুটা সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু এলাকাজুড়ে বেডের দুই পাশে স্তূপাকারে মাটি রাখা হয়েছে। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, বেডের ওপর এবং দুই পাশে মাটি দেওয়া হবে। কারণ রেললাইন স্থাপনের জন্য যে বেড তৈরি করা হয়েছিল তা কোথাও ছয় ইঞ্চি, আবার কোথাও এক ফুট দেবে গেছে। এমনিতেই মাটির বেড প্রথম অবস্থায় কিছুটা দেবে যায়। এ ছাড়া মোস্তর মোড় থেকে লতা এলাকা বিল ডাকাতিয়ার মধ্যে পড়েছে। এই এলাকার মাটি ভালো নয়। তাছাড়া রেলপথের দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য মাছের ঘের। ফলে দুই পাশে পানি থাকায় মাটি দেবে গেছে বেশি। মোস্তর মোড় এলাকায় দেখা যায়, একাধিক ট্রাক, বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতি, রেল স্লিপার, রেলপাটি ও স্তূপাকারে পাথর রাখা আছে। ভেহিকল আন্ডারপাসের (ভিইউপি) দক্ষিণ পাশে শ্রমিক-কর্মচারীরা রেললাইন স্থাপনের কাজ করছেন। সেখানে রেলপাটির সঙ্গে স্লিপারের লক লাগানোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। শ্রমিকরা বলছেন, ভিইউপির উত্তর পাশে রেলপথের বেড ও দুই পাশে মাটি ভরাট, বালু ও তার ওপর পাথর ফেলা, স্লিপার ও রেলপাটি স্থাপন, লক লাগানো এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোটা রেলপথে টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ ৮০ ভাগ শেষ। মাঠ পর্যায়ে এ কাজে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, বাকি কাজ শেষ করতে এখনও অনেক সময় লাগবে। তবে প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের দাবি, যে অংশটুকুতে রেললাইন স্থাপন বাকি, তা সম্পন্ন করতে ৫-৭ দিন সময় লাগবে। ১০ অক্টোবরের আগেই সব কাজ শেষের লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন। এর পর পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেন চালানো হবে।
এই রেলপথে রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল সেতু নির্মাণ কাজ আগেই শেষ হয়েছে। ৯টি স্থানে সম্প্রতি শেষ হয়েছে ভিইউপি নির্মাণের কাজ। বর্তমানে এগুলোর অ্যাপ্রোচ রোড ফিলিংয়ের কাজ চলছে। ভিইউপির কারণে ট্রেন চলাচলের সময় রেলক্রসিংগুলোতে যানবাহন আটকা পড়বে না। এ ছাড়া দুর্ঘটনারও ঝুঁকি থাকবে না। ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, দ্বিগরাজ, কাটাখালী, চুলকাঠি, বাঘা ও মোংলা রেলস্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে ৯৮ ভাগ। কিছু ফিনিশিং কাজ এখনও বাকি রয়েছে। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইন মাসুম বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চার কিলোমিটার এলাকার মাটির গঠন ভালো না হওয়ায় দেবে গিয়েছিল। সমস্যার সমাধান হয়েছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে কাজের স্থানে নির্মাণসামগ্রী নিতে সমস্যা হয়। সেখানে রেললাইন স্থাপনের কাজ শিগগির শুরু হচ্ছে।