মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- সনাতন হিন্দুধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূজার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। সারা দেশের ন্যায় খুলনার দাকোপে এ বছর ৮৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয়া দূর্গা পূজা উদ্যাপনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এদিকে দূর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী এসব সার্বজনীন পূজা মন্ডপ তৈরি করে পূজার প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে ভাস্কারদের কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাটির কাজ। কয়েকটি মন্ডপে আবার ভাস্কাররা শুরু করেছেন রং, তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ। এতে তাদের নিখুঁত হাতের ছোয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দূর্গা, শিব, লক্ষী, সরস্বতি, কার্তিক, গনেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোন কোন প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ অন্যান্য গয়না। এরপর ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি, আর আরতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মন্ডপগুলো। পাশাপাশি আলোক সজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মন্ডপ ও তার আশে পাশে সাজ সজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সাথে সংশ্লিষ্টরা। সাথে সাথে অন্যরাও পূজার কেনাকাটা করতে শুরু করেছেন। উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানস কুমার রায় বলেন, মহা চন্ডীতে উল্লেখ আছে ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সাথে যুদ্ধে রত হন। রাম চন্দ্র পাপের বিনাশের লক্ষে দেবী আদ্ধাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সিতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে নিহত করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার দেবী পক্ষের ষষ্ঠি তিথীতে বোধন তলায় মঙ্গল ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দূর্গা দেবীর এই উৎসব শুরু হবে। আর আগামী ২৪ অক্টোবর মহাবিজয় দশমীতে দেবী দূর্গা প্রতিমা বির্ষজনে উৎসবের সমাপ্তী ঘটবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রমতে এ বছর দেবী দূর্গার আগমন হবে ঘোড়ায় চড়ে। আর পালকিতে চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। চুনকুড়ি এলাকার ভাস্কার কমলেশ মন্ডল জানান, এবছর তার ৩ জনের টিম মিলে বিভিন্ন এলাকায় ১০টি মন্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ প্রায় শেষ এখন রং তুলি দিয়ে শুরু করেছেন প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ। এতে তারা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাবেন। বিভিন্ন মালামালে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিমা তৈরিতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান। এবিষয়ে থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) উজ্জল কুমার দত্ত বলেন, দুর্গাপূজা শুরু হতে এখনও কয়েক বেশ দিন বাকি আছে। পূজায় যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। যেহেতু প্রতিটা পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। আমরা নজরদারি বৃদ্ধিসহ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুলিশ, ব্যাটিলিয়ান আনসার, সাধারণ আনসারসহ মোবাইল টিমের সদস্যরা মোতায়ন থাকবে। এব্যাপারে উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অসিত বরণ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার রায় ও চালনা পৌরসভা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অতিন মন্ডল সাথে আলাপকালে এ প্রতিবেদকে জানান, এ বছর মোট ৮৪টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ২টি পূজা ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রত্যেক মন্ডপ কমিটিকে বলেনটিয়ার টিম রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মন্দিরের বাহিরে সকল প্রকার আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি থাকবে। সকল অপশক্তি রুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রেখে সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ ভাবে দূর্গোৎসব পালন করবেন বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ উজ্জ্বল কুমার দত্ত আমাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। তিনি বলেছেন আমরা আপনাদের সাথে সকল সময় আছি যখনই আমাদের ডাকবেন তখনই প্রশাসন বাহিনী আপনাদের নিরাপত্তার জন্য পাশে থাকবে। তাই বলা যায় প্রশাসনও তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছেন আশা করি সকলে মিলেমিশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্মিশেষে আমরা একে অপরের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শারদীয় দূর্গা উৎসবের সকল আনন্দ উপভোগ করবো।