আধুনিকতার ছোয়ায় বিলুপ্ত প্রায় দাকোপের কুটির শিল্প
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ-
আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার কুটির শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কারণে গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি শিল্প আগের মতো আর চোখে পড়ে না। দাকোপ উপজেলার ৮নং বাজুয়া ইউনিয়ন পরিষদের আশপাশ এলাকার ঋষি পাড়ায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা কয়কটি পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এলাকা সূত্রে জানা যায়, একসময় গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি অনেক ধরনের হস্ত শিল্প বিক্রি করা হতো। যেমন ডালা, কুলা, টুপরি, চালুন, টোপা, ঝাঁটা ,ধামা, মই, মাছ ধরার জোলঙ্গা, পোলো, চারো, ঘুনি,চাটাই, মোড়া, পাটা এবং বিভিন্ন শৌখিন খেলনা সামগ্রী। এ ছাড়া এলাকায় কাঁচা বাসগৃহ তৈরিতে বাঁশের খুঁটি, বেড়া, ঘরের দরজা ইত্যাদি উপকরণও ব্যবহার হতো। এ বিষয়ে বাঁশের তৈরি শিল্প কারিগর ৮নং বাজুয়া ইউনিয়নের মৃত্যুঞ্জয় দাস, শ্যামল দাস, সুরঞ্জন দাস, পরিমল দাস, দীলিপ দাস, উত্তম দাস, সুবল দাস, শশী দাস প্রমুখের সাথে কথা বলে জানা যায় ‘আগে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র নিজেরা বাড়িতে তৈরী করে বাজারে বিক্রি করেছি, তখন বেশ লাভ হতো। কিন্তু এখন তেমন লাভ হয় না। রাত-দিন খেটে যা তৈরি করি হাটবাজারে সে তুলনায় বিক্রি নেই। একটা বাশের বেতী দিয়ে তিনটি ঝুড়ি হয়, সেই তিনটি ঝুড়ি তৈরী করতে দুইজন মানুষের সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সময় লাগে। তারা আরো বলেন, সরকারি ভাবে কোনো সাহায্যে সহযোগিতাও পাচ্ছি না। অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। অভাবের তাড়নায় গোত্রের অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন। উপযুক্ত কাজ এবং অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা অন্য পেশায় যেতে পারিনি। কিন্তু আমাদের গোত্রের কয়েকটি পরিবার ছাড়া অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। এক সময় পল্লিতে বাঁশ ও বেত ঝাড় থাকায় বাঁশের তৈরী শিল্পের প্রচুর ব্যবহার ছিল। কিন্তু আগের মতো এখন বাঁশ, ঝাড় আর বেত চোখে পড়ে না। এর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন বাড়তি দামে বাঁশ ও বেত ক্রয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কুটির শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নিঃস্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী পরিবারগুলো। তারা বলেন, সরকারি সহায়তা পেলে কুটির শিল্পকে আবারও আগের যায়গাতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিলো।