গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার পদে বদলি; নতুন কর্মস্থল ঢাকায় পুলিশের ‘বিশেষ শাখা’ তে যাচ্ছেন জেলার প্রথম নারী পুলিশ সুপার জনাব আয়েশা সিদ্দিকা বিপিএম পিপিএম :
মোঃ মিন্টু শেখ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
০২ বছর ০৬ মাস আগে জনাব আয়েশা সিদ্দিকা গোপালগঞ্জ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। একজন নারী হিসেবে পুলিশের মত চ্যালেঞ্জিং পেশায় এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তিনি কেমন করবেন- এ বিষয়ে ছিল সাধারণ মানুষের চুল চেরা বিশ্লেষণ। কারণ তখন সারা বাংলাদেশেই এটি বিরল ঘটনা ছিল। অনেকের ভাবনায় ছিল, বিষয়টি সহজ হবে না! তার মধ্যেই তিনি আবার এসেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় ঘোষনা করলেন-
“সহজেই পুলিশের সেবা পাবেন গোপালগঞ্জবাসী!”
কথা আর কাজে মিল রাখতে শুরু হলো তাঁর দিন রাত এক করে পরিশ্রম করা। অল্প দিনে তিনি থানায় থানায় বিশেষ সভা ডাকলেন; ওপেন হাউজ ডে, বিট পুলিশিং সভা করে সব এলাকায় আপামর জনসাধারণের কাছে গেলেন। জেলার সব লোক জেনে গেলেন একজন নতুন পুলিশ সুপার এসেছেন, যিনি একজন নারী অফিসার কিন্তু তাকে নারী বা পুরুষ এর কাতারে না ফেলে একজন জনসেবায় নিয়োজিত দক্ষ পরিশ্রমী অফিসার ভাবা-ই শ্রেয় হবে। অল্পদিনেই সবাই বুঝলো তাঁকে দিনে রাতে যে কোন সময় ফোন এ পাওয়া যায়; তিনি সহজেই দাঁড়িয়ে যান অসহায়, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত মানুষের পাশে। মানুষ এটাও বুঝে গেলো তাঁর কাছে সহজে যেমন পৌঁছানো যায় , সহজে সেবা দানে তিনি যেমন বদ্ধপরিকর তেমনিভাবে মিথ্যা অভিযোগ ও দালাল শ্রেনীর বিরুদ্ধেও তিনি সমানভাবে কঠিন।
এর মধ্যে যোগদানের পরপরই ২০২১ এ বিশ্বব্যাপী শুরু হলো ভয়ংকর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। জনসাধারণকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ, মাক্স পড়ানো- ইত্যাদি প্রতিরোধ মূলক কাজে সচেতন করতে নিত্যদিন তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে মাঠে-ঘাটে-রাস্তায় সময় কাটালেন। সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকরের স্বার্থে প্রয়োজনে কোথাও কঠোর ভূমিকা রাখলেন। একই সাথে রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোয় যখন যেখানে কর্মহীন, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, পথশিশু বা খাবার সংকটে পড়া মানুষের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই সাধ্যমত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের। জেলা পুলিশের অভিভাবক হিসেবে সম্মুখ যোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেছেন। প্রয়োজনে দ্রুততার সাথে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর তিনি পুলিশিং এ অধিকতর মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন, অল্প সময়ে কিভাবে নিত্য নতুন পদ্ধতিতে পুলিশের সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় সে চেষ্টায় অবিচল থেকেছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে শুধু একটি থানা-ই এক মাসে ০৭ টি পর্যন্ত মৃত্যদন্ড সাজা প্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার কবাংলাদেশ পুলিশের মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের কাছে ১ লক্ষ টাকা বিশেষ অর্থ পুরস্কার পেয়েছে। জিডি ও মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আধুনিক সকল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুন-ডাকাতি-দস্যুতা বা গণধর্ষণ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছেন; মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করে অব্যাহত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছেন। অনলাইন তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভিআর, চাকরির ভেরিফিকেশন, ভেটিং সহ সকল ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করে সুনাম কুড়িয়েছেন। একই সাথে সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে কখনো নিজেও যুক্ত হয়েছেন ট্রাফিক অভিযানে, কখনো যুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক মহোদয় কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। ট্রাফিক সার্জেন্টদের বডি ওর্ন ক্যামেরার ব্যবহার এর মাধ্যমে ট্রাফিক অভিযানে স্বচ্ছতা এনেছেন, জনসচেতনতা বাড়িয়ে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি রোটারি ক্লাব, বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্ক, চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান; কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক এনজিও এর কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন ক্যাম্পেইন করেছেন। তীব্র শীতের সময় সারাদিনের কাজের ক্লান্তি ভুলে শীতার্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দু:খ কষ্ট অনুভব করে তাদের জন্য গভীর রাতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে গেছেন শীতবস্ত্র হাতে নিয়ে। মানবিক কর্মকান্ডে সবার মাঝে একটি আস্থা অর্জন করায় জেলার প্রতিবন্ধী, সুবিধা বঞ্চিত নারী-শিশু সহ বিপদগ্রস্থ অনেকেই তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। সাধ্যমতো নিজে কিংবা কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়ে উপলব্ধি করিয়ে এদের মাধ্যমে অনেকের লেখাপড়া বা অক্ষম হলে ভরনপোষণ এর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, কাউকে দোকান করে দিয়ে বা গবাদি পশু ক্রয় করে দিয়ে স্বাবলম্বী করার প্রয়াস নিয়েছেন। তিনি জনগণের এত কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন যে আমরা দেখেছি আত্মহত্যার সময়েও একজন কিশোরী জেলার পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তার অভিমানের কথা বলতে চায়! আবার তাঁ রই তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে সে কিশোরীকে প্রাণে বাচানো সম্ভব হয়। এ ঘটনায় সর্ব মহলে পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি প্রশংসিত হন। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্কুল কলেজ পরিদর্শন করে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ ও আত্মহত্যার মতন সামাজিক সমস্যা বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সচেতনতা বৃদ্ধি প্রোগ্রাম সমূহের মাধ্যমে তিনি তরুন ও কিশোর কিশোরীদের আদর্শে পরিনত হতে পেরেছেন। ইভটিজার ও কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। ছাত্রীদেরকে তিনি একটি বিশেষ স্লোগানে উজ্জীবিত করেছেন,
“আমরা নারী- আমরা সব পারি।”
এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার সময়ে তিনি জেলা পুলিশের সকল ইউনিট ও অফিসে রক্ষিত পতিত জমিতে নানান সবজি ও ফসল চাষ করিয়েছেন; পুকুর গুলোতেও করিয়েছেন মাছের চাষ। এটি সবার জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে এবং পত্র পত্রিকায় ফলাও করে এ সাফল্য প্রচারিত হয়।
তিনি টানা দুই বছর গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশে মাত্র ১০০ টাকা ফি-তে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ কার্যক্রম দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। তিনি ২০২২ সালে