চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ
মাসুদ পারভেজ
আগামী মাসে শেষ হচ্ছে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ ইতোমধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ, যা টাকার অংকে তিন হাজার ১৮ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং খালের জায়গা বেদখল হওয়ায় প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাবনা সংশোধন বা আরডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আরডিপিপি অনুমোদন পেলে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে বাড়বে টাকার অংকও। ডিপিপি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুনে শেষ হয়। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্পের অগ্রগতি কতদূর : প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতভুক্ত নগরের ৩৬টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে মোট ২১টি খালের কাজ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী।
ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৪৮টি ব্রিজ, ৬টি কালভার্ট, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ, পাঁচটি রেগুলেটর, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটর নতুন ড্রেন, ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার খালের পাশে সড়ক নির্মাণ ও ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সমপ্রসারণ করার কথা।
বিপরীতে ব্রিজ, কালভার্ট, নতুন ড্রেন, রোড সাইড ড্রেন এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া রিটেইনিং ওয়ালের কাজ ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ রেগুলেটরের কাজ ৯৮ শতাংশ, সিল্ট ট্র্যাপ এর কাজ ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, খালপাড়ের রাস্তা ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ফুটপাত এর কাজ ১১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ ইতোমধ্যে ১১৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৪৫টি ব্রিজ, ছয়টি কালভার্ট, ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেন, ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, পাঁচটি রেগুলেটর, ১৩টি সিল্ট ট্রিপ, ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পাড়ের রাস্তা নির্মাণ এবং ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা : ৭০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, খাল পাড়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তা ও ২৭টি সিল্টট্রাপ নির্র্মাণে জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ডিপিপি অনুযায়ী, পানি ধারণের জন্য তিনটি র্স্টম ওয়াটার রিজার্ভার বা জলাধার নির্মাণ করা হবে। যেগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ আসবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় একটিরও নির্মাণ কাজ শুরু করা যায় নি।
প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আমাদের প্রকল্পের কারণে এবার জলাবদ্ধতা হবে না। রেগুলেটরের কাজ প্রায় শেষ। এগুলোর সুফল পাচ্ছি। আগ্রাবাদ এলাকা বিশেষ করে মা ও শিশু হাসপাতালে জোয়ারের পানি ঢুকে যেত। গত অমাবস্যায় কিন্তু পানি উঠেনি। শহরকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা মুক্ত করার জন্য প্রকল্পের বাইরে যে ২১টি খাল আছে সেগুলো সচল করতে হবে। প্রকল্পের বাইরে প্রায় সাড়ে ১৩শ কিলোমিটার ড্রেন আছে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
নগরে জলাবদ্ধতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালের অবৈধ দখল, সব ধরনের আবর্জনা খালে ফেলা এবং খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা, অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খালের সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিকল্পিত সংযোগ না থাকা, নিয়মিত খাল ও ড্রেন পরিস্কার না করা এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের মাধ্যমে ব্রিজ ও কালভার্টের পানির প্রবাহ ব্যহত হওয়া দায়ি। ৬১টি পয়েন্ট রয়েছে যেখানে ইউটিলিটি সার্ভিসের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।