পরিবেশকর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে দশ পরিবেশ সংগঠনের মানবন্ধন
মাসুদ পারভেজ
পরিবেশকর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে দশ পরিবেশ সংগঠনের মানবন্ধন
শেয়ার
চট্টগ্রামের পাহাড় নিধন ও পরিবেশ রক্ষা কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন করেছে দশটি পরিবেশ সংগঠন। রোববার (১৬ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি সংবিধানের ১৮ ‘ক’ ধারায় রাষ্ট্রকে বর্তমান ভবির্ষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে জীববৈচিত্র রক্ষার কথা বলা হয়েছে। যে মানুষটি উন্নত বিশ্বের বিলাসি জীবন ফেলে খাগড়াছড়ির গভীর জঙ্গলে জীব বৈচিত্র রক্ষার জন্য কাজ করছে তার উপর ধারাবাহিক হামলা হচ্ছে। মানুষ তার মা-ভাই-সন্তানকে ভালবাসে। কজন মানুষ আছে যারা রাস্তার কুকুরকে ভালবাসে, কয়জন মানুষ আছে যে বনের শিয়াল হরিণকে নিয়ে চিন্তা করে। বন্য পশুপাখির প্রতি ভালবাসা নিঃস্বার্থ এই ভালবাসা আমাদের সমাজের মানুষ কেমন সেটাই আমাদের জানতে শেখায় বুঝতে শেখায়। আমাদের পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করেন তারা নিঃশ্বার্থভাবে কাজ করেন। তাদের উপর আঘাত মানে জাতীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত। সেই আঘাত কে করছে? খাগড়াছড়ির মাহফুজ রাসেলের উপর যারা হামলা করে সেই অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না কেন? আমরা দেখি মাঝরাতে সাংবাদিকদের কোমরে দড়ি দেয়া হয়। কেন দেখিনা পরিবেশ রক্ষাকারীদের হামলার বিষয়ে অপরাধীদের নাম ধরে অভিযোগ করার পরও তাদেরকে গ্রেফতার করতে? আমরা কি একটি মূল্যবোধহীন জাতিতে পরিনত হচ্ছি না? এই জাতির মূল্যবোধ হবে সহযোগিতার, সহমর্মিতার। বাঙালি জাতির মূল্যবোধ হবে সহমর্মিতার, সংবেদনশীলতার। আামাদের দেশে দুষ্টের দমন হতে হবে, শিষ্টের পালন করতে হবে। আমরা উল্টোটা দেখছি।
তিনি আরও বলেন, যারা পরিবেশ রক্ষাকারীদের মারধর করেছে তাদের মধ্যে খাগড়ছড়ির বনবিভাগের লোকজনের হাত আছে। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। খাগড়াছড়ির রাসেলসহ সকল পরিবেশ কর্মীদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে দিতে হবে, রাসেলকে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সরকার যদি আমাদের দাবী না মানে, আজকে চট্টগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ করছি, আগামীতে খাগড়াছড়ির বনবিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তর সিটি কর্পোরেশন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কাজ করলেই পাহাড়, নদী, খাল রক্ষা করা সম্ভব। চট্টগ্রাম পাহাড় রক্ষায় বেলা হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট মামলার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তা বাস্তবায়ন করা হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এসময় তিনি ২০০৭ সালে শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির প্রদত্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করে পাহাড়সুমাারি ও পাহাড়ের ধরণ অবস্থান সুনির্দিষ্ট করার দাবীও জানান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী সংগঠনগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, অগ্নিবিনা পাঠাগার, গ্রীণ ফিঙ্গারস, পরিবেশ ফোরাম ৮৮ সেইভ দ্যা নেচার, বাংলাদেশ ওয়াইল্ড ওয়াচ, স্নেইক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ, পুকুর রক্ষা আন্দোলন।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার আলীউর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাইকা গবেষক পরিবেশবিদ অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব পুকুর রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি আবদুল আলীম, ন্যাপ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, গ্রিণ ফিঙ্গারস এর কো ফাওন্ডার আবু সুফিয়ান, রিতু ফারাবি, সাংবাদিক ও সংগঠক প্রিতম দাশ, সেইফ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান আনম মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিবেশ ফোরাম ৮৮ এর পরিচালক মঞ্জুরুল করিব বিপ্লব পরিবেশ প্রমুখ।