আরিফ খান জয়ঃ
পাবনার আটঘরিয়ায় ৬ বছরেও চালু হয়নি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত বিদ্যালয়টি। ২০১৭ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। শিক্ষক-কর্মচারি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বিদ্যালয়টি চালু করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা জেলার ৯ উপজেলায় মোট ৬ হাজার ২৭৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ রয়েছেন শিক্ষার্থী। এদের অনেকেই আবার দরিদ্র ঘরের। সাধারণ বিদ্যালয়ে তাদের পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিসেবে তাদের পড়াশোনার সুযোগদানের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করাতে হবে। এজন্য ২০১৭ সালে জেলার আটঘরিয়া উপজেলা সদরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৫ শতক জমির ওপর দ্বিতল বিদ্যালয় ভবনটি নির্মিত হয়েছে। বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। বিদ্যালয়টি চালুর জন্য আবাসিক শিক্ষক, বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষক, বাবুর্চি, প্রহরী, এমএলএসএসসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়। তবে এসব সৃষ্ট পদে এত বছরেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন এই পদগুলো শূন্য থাকায় বিদ্যালয়টি আর চালু হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আটঘরিয়া-চাটমোহর আঞ্চলিক সড়কের পাশে আটঘরিয়া বাজার। পাশেই আটঘরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিবর্ণ হয়ে গেছে ভবনের দেওয়াল। খসে পড়েছে দেওয়ালের পলেস্তারা। মুছে গেছে নামফলক। প্রবেশ ফটক থেকে ভেতরের দরজা সব তালাবদ্ধ। প্রবেশ ফটকের সামনে আবর্জনার স্তূপ।
বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, ভবনের কাজ হওয়ার পর কিছুদিন পর্যন্ত সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজনকে এখানে দেখা যেত। কোনোদিন এখানে কোনো শিক্ষার্থী আসতে দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে ভবনের প্রবেশপথে আবর্জনার স্তূপ জমেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
আটঘরিয়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি নির্মাণের সময় অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। অনেকেই এসে খোঁজখবর নিতেন। কীভাবে এখানে ভর্তি করা যাবে, জানতে চাইতেন। কিন্তু বিদ্যালয়টি চালু না হওয়ায় এখন আর কেউ আসেন না।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, তারা জানেনই না এটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়। এত সুন্দর একটা বিল্ডিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক।
জেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক কেএম সরোয়ার হোসেন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ব্যয়বহুল প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচির পরিবর্তে স্থানীয় বিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় লেখাপড়া করানো হবে। এতে তারা নিজস্ব পরিবেশ ও অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাফেরা করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখতে হয়। তাদের দেখভালের জন্য লোকবল প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ছয় বছর আগে বিদ্যালয়ের জন্য ভবন নির্মাণ করা হলেও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে বিদ্যালয়টি চালু করা সম্ভব হয়নি। পূর্ণাঙ্গ লোকবল নিয়োগ হলেই বিদ্যালয়টি চালু করা সম্ভব হবে।