মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ-
বাগেরহাট থেকে উদ্ধার হওয়া সুন্দরবনের স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো কুমিরটিকে আবারও অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ। এশিয়ায় নোনা পানির কুমিরের ওপর করা প্রথম গবেষণার ৪টি কুমিরের মধ্যে এটি অন্যতম। স্যাটেলাইট বসানো কুমিরটিকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের চরাপুটিয়ার গহীন বনে ফের অবমুক্ত করা হয় কুমিরটিকে। পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো সুন্দরবন থেকে অবমুক্ত করা কুমিরটি ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাগেরহাটের চিতলমারীর কলাতলা দণি শৈলদাহ গ্রামের মো. হাসান শেখের মৎস্য ঘেরে অবস্থান করে। এর সঙ্গে আরও ৩টি কুমিরকে একই সময়ে সেই জায়গা থেকে অবমুক্ত করা হলেও, শুধু এই কুমিরের ক্ষেত্রেই চলাচল এবং অভ্যাসের ব্যাপক ভিন্নতা দেখতে পায় নোনা পানির কুমির নিয়ে গবেষণা করা দলটি। অবশেষে মৎস্য ঘের থেকে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) উদ্ধার করে আবার বনে অবমুক্ত করা হয়েছে কুমিরটিকে। বন বিভাগ জানায়, গত বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালি নদী হয়ে বরিশালে ঘোরাফেরা করছিল এই কুমির। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এই প্রথম গবেষণার মাধ্যমে নোনা পানির কুমিরের আচরণ, চলাচল ও গতিপথ জানার জন্য পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছিল ৪টি কুমির। বাকি সবগুলো সুন্দরবনের আশে-পাশে অবস্থান করলেও, এই কুমিরটিকে লোকালয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। বন বিভাগ আরও জানায়, সুন্দরবনের নোনা পানির কুমিরের চলাচল, গতিবিধি, আচরণ ও আবাসস্থল, গবেষণার মাধ্যমে জানার জন্য গত ১৩ ও ১৬ মার্চ ৪টি কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের হারবাড়িয়ার বনের একাংশের গহিনে অবমুক্ত করা হয়। এগুলোকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় কম্পিউটারে সার্ভে করা হয়। পুকুরে মিলল ট্রান্সমিটার লাগানো কুমির লোকালয়ে অবস্থান করা কুমিরটি সম্পর্কে বন বিভাগ বলে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এই কুমিরটি হয়তো নোনা পানি সহ্য করতে না পেরে, দলছুট হয়ে তার সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের আবাসস্থল খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি জেলার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকায় অবস্থান করে সে। পরে কুমিরটিকে উদ্ধার করে, প্রথমে খুলনা বন বিভাগের উদ্ধার কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় এবং ফের অবমুক্ত করা হয়। খুলনা বন্য প্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য বলেন, কুমিরটির অবস্থান মোংলা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, পিরোজপুর ও বরিশাল হয়ে চিতলমারীতে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। কুমিরটিকে বনের গহীনে চরাপুটিয়া এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে, সেখানে অনেক কুমিরের আবাসস্থল রয়েছে। যাতে এটি অন্য কোনো দিক যেতে না পারে, সেজন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। খুলনা বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, কুমিরটি দলছুট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য রাখা হচ্ছিল। এর মধ্যে অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নোনা পানির কুমির হওয়া সত্ত্বেও, এটি মিষ্টি পানিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ পর্যন্ত যে কয়টি জেলায় এই কুমিরের অবস্থান পাওয়া গেছে, সব জায়গাতেই মিষ্টি পানির অঞ্চলে এর গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৩ মার্চ স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে বনে অবমুক্ত করা ৪টি কুমিরে মধ্যে ২টি করমজলে বড় করা হয়। আর অন্য ২টির মধ্যে একটি ‘জুলিয়েট’ এবং অন্যটি যশোরের মাইকেল মধুসুদন দত্তের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা কুমির ‘মধু’।