সাঁথিয়ায় হত্যা মামলার তদন্তকারী সাংবাদিককে বেঁধে গনপিটুনি দেবার নির্দেশ দেন ওসি আনোয়ার
পাবনা প্রতিনিধি
হত্যা মামলার তদন্তকারী সাংবাদিককে বেঁধে গনপিটুনি দেবার নির্দেশ দেয় সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন।
গতকাল পাবনার কাশিনাথপুরে স্কাইলার্ক স্কুলের প্রাক্তণ শিক্ষিকা হাফসা খাতুন (৩০) স্বামী ও স্বামীর ভাই কর্তৃক হত্যার স্বীকার হন। এবং হত্যাকাীরা হথ্যা করে কয়েক লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেন। এ বিষয়ে দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকার বেড়া-সাঁথিয়া প্রতিনিধি আব্দুল জব্বার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও হত্যাকারীর পরিবার ও সহযোগীরা ভূয়া সাংবাদিক বলে সাংবাদিকের ক্যামেরা, সরঞ্জামও আইডি কার্ড কেরে নেয় এবং শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে। এসময় সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করেও কোন সারা মেলেনি এরপর হত্যাকারীর পরিবার কল দিলে সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিককে বেঁধে গণপিটুনি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কাশিনাথ পুর উপজেলা স্বাস্হ্য কেন্দ্র সংলগ্ন ঘটনা ঘটেছে। নিহত গৃহবধূ বেড়া উপজেলার আতরশোভার মাওলানা নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় স্কাইলার্ক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাফসার স্বামী মেহেদী হাসান জিয়াকে (৩৫) আটক করলেও নিহতের পরিবার মামলা করতে চাইলেও মামলা নেওয়া হয়নি। আটককৃত জিয়া আমিনপুর থানাধীন টাংবাড়ি গ্রামের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন খানের ছেলে।
নিহত হাফসার মা বলেন, ‘১৫ বছর আগে জিয়া জোরপূর্বক আমার মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের হামিম (১৩) ও জ্যোতি (৪) নামে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জিয়া টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। পরে আমরা ব্যবসা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু বখাটে জিয়া ব্যবসা না করে টাকাগুলো জুয়া খেলে নষ্ট করে। কিছুদিন পরে আবার আমার মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। মাঝে মধ্যেই মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। মেয়ের সুখের কথা ভেবে মাঝে মধ্যেই টাকা-পয়সা দিতাম। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতেও বাধ্য হই। কিন্তু তবু্ও আমার মেয়ে মন পায়নি। জিয়ার বাবা-মাসহ পরিবারের সকলে মিলে আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চালাতো। শুধু দুই শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল যন্ত্রণা সহ্য করেও সে সংসার করতে চেয়েছে। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না। আমি এর বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন সকাল থেকেই জিয়া হাফসাকে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশি এক মহিলা হাফসার শিশুকন্যা জ্যোতিকে নিজের কাছে নিয়ে রাখেন। বিকেলের দিকে বাসায় ভাংচুর ও উচ্চস্বরে চেঁচামেচি ও কান্নাকাটির শব্দ হলে পার্শ্ববর্তী নবীর সরদার সহ কয়েকজন বাসায় প্রবেশ করতে গেলে বিল্ডিং মালিক তাদের বাঁধা দিয়ে জানায়, এটা ওদের পারিবারিক বিষয়। মাঝেমধ্যেই ওদের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমাদের বহিরাগতদের নাক গলাতে যাওয়া উচিত হবে না। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাফসার ছেলে হামিম ঘটনার সময় অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তাকে স্হানীয় মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামিম জানায়, তার ফুপা মেহেদী হত্যার কাজে তার বাবার একমাত্র ইন্ধনদাতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন,এর আগেও প্রায় দিনই মারপিট করতো জিয়া। প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে গেলে তাঁদেরও গালিগালাজ করতো জিয়া।’
সকালে সাংবাদিক নিহত হাফসা খাতুনের স্কুলে গিয়ে উনি ঐ স্কুলে শিক্ষক ছিলো কিনা জানতে চাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষকেরা অস্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষিকা অসুস্থ হওয়ার কথা বললে ভিডিও ও তথ্য দিতে অপারগতা জানালেও পরবর্তীতে নিজে একাধিক ক্লাস নেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন মোটা অংকের অর্থ দেন দরবার করে, নিহতের বাবা মাওলানা নজরুল ইসলাম মামলা করতে গেলে মামলা নিতে গড়িমসি করেন। এবং ভয়ভীতি দেখান। নিহতের বাবা বলেন পুলিশ মামলা না নিলে আমার মেয়ের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মামলা করবো। এবং আমি আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয় এ আনন্দ বাজার পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি শিশির ইসলাম সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন এর কাছে সাংবাদিক হেনেস্তার বিষয় জানতে চাইলে ওসি উত্তেজিত হয়ে বলেন ভাই ও তো ভূয়া সাংবাদিক মাস্তানি করতে গিয়েছে তাই এলাকার জনগনকে বলেছি ওকে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করতে। তারপর চালান করে দিব ওর সাংবাদিকতাকতার সাধ মিটিয়ে দিব, সাংবাদিকদের আইডি কার্ড থাকা অবস্হায় আপনি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে ঘটনাস্থলে না গিয়ে এমন হুকুম দিতে পারেন কি না এটা জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ওসি ফোন কেটে দেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এর এমন আচরণ পাবনার সাংবাদিকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং এ বিষয় এ সাংবাদিক হেনেস্তায় মদদ দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এর এমন আচরণ এর সুষ্ঠতদন্তের মাধ্যমে বিচার চান।
এ বিষয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন সাংবাদিককে হেনেস্তায় একজন দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারের ভূমিকা দুঃখজনক। তিনি বলেন গণমাধ্যম কর্মীরা সবসময় জনগণের স্বার্থে সঠিক তথ্য দিতে সকলের সহযোগিতা আশা করেন। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে সুষ্ঠ বিচারে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।