এস এম আলমগীর চাঁদ ( পাবনা প্রতিনিধি )
পাবনার সাঁথিয়ায় এক মাদ্রাসার ছাত্রকে হাত,পা বেঁধে টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে বেত ও স্কেল দিয়ে বেদম পিটিয়ে জখম করেছে ওই মাদরাসার হেফজ শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইন।বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী আশংকাজনক অবস্থায় সাঁথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না করে এলাকায় বসে একটা বিচার করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাদরাসার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ এলাকার জনপ্রতিনিধি।
অভিযোগে জানা গেছে,উপজেলার হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসার হেফজ শিক্ষার্থী আসাদুল( ৮) জন্ডিস হওয়ার কারণে বিগত কয়েকদিন মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকায় গত রোববার (০২ সেপ্টম্বর) রাত ১১টার দিকে ওর সহপাঠী সজিবকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠায় মাদরাসার শিক্ষক। আসাদুল মনে করেছে সিয়াম টাকা পাবে এজন্য এসেছে।পরে আসাদুলের মা ১০০ টাকা দিয়ে দেয় সিয়ামকে দেয়ার জন্য।আসাদুল ১০০ টাকা নিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা সিয়ামকে দেয়ার জন্য গেলে সেখানে হুজুর ইকবাল হোসেনও উপস্থিত ছিল। এ সময় হুজুর আসাদুলকে জিজ্ঞাসা করে সে কেন এতোদিন মাদরাসায় অনুপস্থিত। উত্তরে আসাদুল অসুস্থের কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে মাদরাসায় গিয়ে পিটমোড়া করে বেঁধে,মাথা টেবিলের নিচে দিয়ে বেদম মারপিট করে। এসময় আসাদুলের গগন বিদারী চিৎকারে রাতের আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। তবু কারো কানে পৌঁছায়নি তার আর্তনাদ। এক পর্যায়ে আসাদুল নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় তাকে জখম অবস্থায় হাত,পা বেঁধে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে। কিছুক্ষণ পরে আসাদুলের ভাই খবর পেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বললে তিনি দৌড়ে মাদরাসায় যান। গিয়ে ছেলেকে খুঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করেন,ছেলে কই? উত্তরে তিনি বলেন,কেন ছেলে তো বাড়ি গেছে। পরে তিনি এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করে দেখেন,যে কাঁথার নিচে শুয়ে ছেলেটা কাতরাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে রোববার রাত ১টার দিকে সাঁথিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আসাদুলের মা শোভা খাতুন জানান,আমার ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ায় তাকে আমরা মাদরাসায় যেতে দেইনি। আমি যদি ওই সময় দ্রুত না যাই তাহলে হয়তো আমার ছেলে মারা যেতো। কোন মানুষ হয়ে এভাবে কোন শিশু সন্তানকে মারতে পারে? তিনি বলেন,ওই হুজুরের মনে হয় কোন সন্তান নাই। থাকলে এভাবে অমানবিক নির্যাতন করতো না।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশারফ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,ওই শিক্ষার্থীর যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার নেয়া হয়েছে মাদরাসার পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে সাঁথিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,শিশুটিকে যেদিন নিয়ে আসে সেদিন তার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। এখন তার অবস্থা আশংকামুক্ত। তবে তাকে নিবির পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মারপিটের জখম শুকাতেও সময় লাগবে।