নিজস্ব প্রতিবেদক
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার পেছনে কোনো রাজনীতি জড়িত নয়। তাঁকে আইন ও মানবিকতার সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মানবিকতা দেখানোর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা খালেদা জিয়াকে ভয় পাই না।’
আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জামিনে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তার জন্য আদালতের আদেশ বা নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন ছিল না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বিষয়টি এক নয়।’
এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বয়স এখন আশির ওপরে। তারপর আবার তিনি অসুস্থ। তার (খালেদা জিয়ার) যাবার (মৃত্যুর) সময় হয়ে গেছে। এখন তাকে নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নেই।’ গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।
এ আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় নেতিবাচক মতামত দেয়। গত রোববার (১ অক্টোবর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন গ্রহণ করার সুযোগ নেই। আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে আবেদন এসেছে তাতে স্থায়ী জামিন ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এর আগে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী দুটি শর্তে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কাজেই আমরা নতুন করে আরেকটি আবেদন গ্রহণ করতে পারি না। আমাদের এ সুযোগ নেই।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছুই করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্তযুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না। প্রথমে তাঁকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। পরে তা আরও আটবার বাড়ানো হয়েছে। এখন আইনের যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে আগের অবস্থায় যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।