বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের গুম করা বর্তমান আওয়ামী সরকারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন। গতকাল শুক্রবার (২৬ মে) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব এ বাণী দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে সত্যভাষী মানুষের নিরাপত্তা চরম সংকটাপন্ন। দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার জন্য গুমকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়ে এরা দেশকে এক ভীতিকর জনপদে পরিণত করেছে। অগণতান্ত্রিক সরকার বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে না এগিয়ে একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে মনুষ্যত্বহীন পন্থায় মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করাসহ অনেককেই গুম করে অদৃশ্য করে দিচ্ছে। গুম হওয়া নিয়ে সারা দেশের মানুষ গভীর শঙ্কা, ভয় ও শিহরণের মধ্যে বাস করছে। কে কখন গুম হয়ে যায়–এই শঙ্কায় দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেবল কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনে গুম করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটে। গুম মানবসভ্যতার পরিপন্থী। আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে গুম একটি অচেনা বিষয়, কিন্তু বাংলাদেশসহ যেসব দেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার, সেখানে নিজেদের পথের কাঁটা সরানোর জন্য তারা গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। গুম মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ হলেও বর্তমান আওয়ামী সরকার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রতি এরা ভ্রুক্ষেপহীন। সবার চোখের সামনে থেকে ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গুম করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের বিষয়টি সব আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করে আসছে। অথচ বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর সুষ্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই সম্ভব সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।’
বাণীতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই—অবিলম্বে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ গুম হয়ে যাওয়া অসংখ্য নেতাকর্মীকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পালিত হচ্ছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তিন জনের বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাই। আরও ১৬১ জনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদিও আমাদের হিসেব মতে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও তিন থেকে চার গুণ বেশি হবে।’
দলটির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে গুমের ঘটনা বন্ধ করতে এবং গুমের শিকার সবার ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দেয়।