শিয়া মুসলিম ইসলামের শত্রু নাকি বন্ধু?
– এস এম জুলফিকার জুয়েল।
পৃথিবীর বুকে ‘শিয়া’ হচ্ছে এমন একটি সম্প্রদায়ের নাম, যাদের নিকট না আছে ‘ইসলাম’, না আছে ‘ঈমান’ । কখনো তারা সাহাবায়ে কিরামগনের অবমাননা করে, কখনো তারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক এবং উমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুমার শানে অশোভনীয় শব্দাবলী প্রয়োগ করে । শুধু তা-ই নয়, এরা আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর হাবীব, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র সম্পর্কেও চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে ।
শীয়া‘ একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ অনুসারী। ৬৩২ খৃষ্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ (সা.) -এর মৃত্যুর পর হযরত আবু বকর খলিফা নির্বাচিত হলে কয়েকজন দাবি করে হযরত মুহম্মদ (সা.) ঐতিহাসিক গাদীর খুমের (সৌদি আরবের হেজাজে রাবিগের নিকটবর্তী জহফাতে একটি মসজিদ। এর পার্শ্ববর্তী স্থানে ভাষণটি দেওয়া হয়।) ভাষণে তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী ইবনে আবী তালিবকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করে যান।
মুসলিম সম্প্রদায়ের খলিফা হিসেবে মুহাম্মদ সাঃ এর উত্তরাধিকার লাভ নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদ ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলশ্রুতিতে জামালের যুদ্ধ ও সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কারবালার যুদ্ধের পর এই বিরোধ কিছুটা কমে গেছে, যেখানে উমাইয়া খলিফা প্রথম ইয়াজিদের অধীনে হুসাইন ইবনে আলী ও তার পরিবার-পরিজন নিহত হন, এবং প্রতিশোধের স্পৃহা প্রারম্ভিক ইসলামী সম্প্রদায়কে দুভাগে বিভক্ত করে দেয়, যা বর্তমানে ইসলামী শিয়াবাদ নামে পরিচিত। শিয়ারা বেশির ভাগই ১২ ইমাম প্রথার অনুসারী।
শিয়াদের মধ্যে হিশাম ইবনুল হাকাম সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক উনার শানে চরম কুফরী মুলক কথা বলে-
তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নুযুল (দুনিয়ার আসমানে অবতরণ) অস্বীকার করে, কুরআন শরীফ-কে মাখলুক বলে এবং পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদারকে অস্বীকার করে।
তারা বলে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন খুশি হন তখন ফার্সি ভাষায় কথা বলেন এবং যখন রাগান্বিত হন তখন আরবী ভাষায় কথা বলেন”
এরা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীমকে প্রিয় নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র নবুয়তের সাথে অংশীদার মানে।
তারা হযরত আলী রা. মহান আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ মনে করে থাকে। তাই তারা বলে, “আমি প্রথম, আমি শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের অধিকারী।”
শিয়ারা দাবি করেছে যে, হযরত আয়েশা রা. একজন হিংসাত্বক মহিলা ছিলেন এবং তিনি ইফকের ঘটনায় আত্বহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। যেহেতু রাসূলের স্ত্রীদের ছোট একটা ভুলের জন্য সূরা আহযাব নাযিল হয়েছিল সেহেতু রাসূলের স্ত্রী হিসেবে আয়েশা রা. এর এত বড় অপরাধের জন্য আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আয়াত নাযিল করতেন।
শিয়াগণ মুসলিমদের নিকট বর্তমানে বিদ্যমান কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না তিন কারণে:
প্রথম কারণ:
শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ সকলেই মিথ্যাবাদী। অনুরূপভাবে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের ইমামগণ মিথ্যাবাদী এবং ‘তাকীয়া’-র অনুসারী। “আর তারা বিশ্বাস করে মিথ্যা বলা ইবাদত”।
দ্বিতীয় কারণ:
শিয়াদের আকিদা (বিশ্বাস) অনুযায়ী সাহাবীগণ মিথ্যাবাদী ছিলেন। আর তারাই আল-কুরআনুল কারীম কপি করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন। সুতরাং কিভাবে শিয়াগণ বিদ্যমান এই কুরআনের বিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার ব্যাপারে আস্থা পোষণ করবে?
তৃতীয় কারণ:
শিয়াদের মত অনুযায়ী তাদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে বর্ণিত বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ; যার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শিয়াদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে একটি বিশুদ্ধ বর্ণনাও পাওয়া যায়না, যা প্রমাণ করবে যে, কুরআন পরিপূর্ণ, অবিকৃত এবং অপরিবর্তিত। সুতরাং কুরআন মাজীদের অবস্থান শিয়াদের নিকট বিশুদ্ধ হাদিসের অবস্থানের চেয়েও অপূর্ণাঙ্গ।
হাদিসগ্রন্থ: শিয়া সম্প্রদায়ের কিছু আলাদা হাদিসগ্রন্থ রয়েছে । যাতে সুন্নিদের হাদিসের যেমন অনেক মিল আছে তেমনই অনেক গড়মিলও রয়েছে। শিয়ারা পাঁচটি গ্রন্থকে হাদিসের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ বলে মনে করে। এগুলো হলোঃ উসুল আল-কাফি আল-ইসতিবাসার আল-তাহজিব মুন লা ইয়াহ্দুরুহু আল-কাফিহ্ নাহ্জুল বালাগা।
ইসলামের রুকনঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ৫ রুকনের সাথে তাদের রুকনের পার্থক্য রয়েছে। তাদের রুকনগুলো হলোঃ ১. নামায ২. রোযা ৩. হজ্জ ৪. যাকাত ৫. বেলায়েত (উছুল কাফী)
কালিমা শরীফঃ শিয়াদের কালিমা শরীফ ভিন্ন। তাদের কালিম শরীফ হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ আলী ওয়ালী উল্লাহ” কালিমা শরীফ নিয়ে তাদের বক্তব্য হলো, “আলী ওয়ালী উল্লাহ ব্যতীত কালিমা তাইয়্যিবা মিথ্যা”।
নামাজ : শিয়াদের নামাজ সুন্নিদের থেকে খানিকটা আলাদা। সুন্নি মুসলমানরা যেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, শিয়ারা সেখানে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। শিয়াদের কাছে যোহরের নামাজের সাথে আসরের নামাজ এবং মাগরিবের নামাজের সাথে এশার নামাজ সমন্বিতভাবে পড়ে ফেলার বিকল্প রয়েছে, অধিকন্তু, সুন্নিরা তাদের বুকের উপর হাত রেখে নামাজ আদায় করেন, যেখানে শিয়ারা তাদের বাহু তাদের পাশে রেখে নামাজ আদায় করেন।
তারা মনে করেন পৃথিবীর সকল মাটি অপবিত্র, তাই তারা নামাজ পড়ার সময় কাবা শরীফ থেকে নিয়ে আসা মাটি দিয়ে তৈরি করা টালির উপর সেজদা প্রদান করে। শিয়া মুসলমানদের মধ্যে তারাবির ব্যস্ততা নেই। কারণ শিয়া মাজহাবে তারাবি নামাজের বিশেষ গুরুত্ব নেই।
রোযাঃ শিয়ারা পশ্চিম আকাশের লালিমা দূর না হওয়া পর্যন্ত ইফতার করে না। এ অবস্থাকে তারা গুরুবে ওয়াকিই বা তব অস্ত বলে। রমজান মাসের শেষ রাতগুলোতে খোদা হাফেজ মাহে রমজান নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচলিত রয়েছে।
হজ্জঃ শিয়াদের হজ্জ নিয়ে কুফরী আক্বীদা রয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- “আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীগণ হচ্ছে জারয সন্তান” (বেহারুল আনওয়ার, আল মাজেলেসী) শিয়াদের হজ্জে মহিলা হাজীদের মাহারাম লাগে না।
যাকাতঃ শিয়াদের মতে, মোট ৯ প্রকার সম্পদের যাকাত ওয়াজিব; যথাঃ গম-যব, খুরমা-কিশমিশ, গরু, মহিষ, ভেড়া, বকরি, উট, স্বর্ণ ও রৌপ্য
আযানঃ সুন্নীদের সাথে তাদের আযানেরও পার্থক্য আছে। শিয়ারা আযানে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” এর পরে “আশহাদু আন্না আলিউন ওয়ালী উল্লাহ” এবং “হাইয়া আলাল ফালাহ” এর পরে “হাইয়া আল খায়ির আল আমল” পড়ে।
বর্তমান বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানদের মধ্যে ১৫% হল শিয়া। শিয়া মুসলমানদের সংখ্যা ৩০ কোটি। শিয়ারা আজারবাইজান, বাহরাইন, ইরান ও ইরাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, এছাড়া লেবাননে তারা সুন্নি মুসলমান ও মারোনীয় খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি অন্যতম সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়।
শিয়া মুসলিমরা বাংলাদেশে একটি বৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, এখানে শিয়া মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৩২ লাখের উপরে। দাউদী বোহরা সম্প্রদায়ের শিয়াদের মূলত চট্টগ্রামে এবং নিজারি ইসমাইলি সম্প্রদায়দের শিয়াদের মূলত ঢাকায় পাওয়া যায়। ঢাকার বকশীবাজারের হোসেনী দালান হলো বাংলাদেশের বৃহত্তম শিয়া মসজিদ এবং প্রধান ইমামবাড়া। ঢাকা জুড়ে আদাবর, পল্টন, মোহাম্মদপুর, ফরাশগঞ্জ ও আজিমপুরের মতো জায়গায় অসংখ্য ইমামবাড়া ও শিয়া মসজিদ রয়েছে।