স্টাফ রিপোর্টারঃ গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর ২০২৪) ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে সামনে সকাল ১১ টায় একদফা দাবী নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীর সহবস্থান দেখা গিয়েছে। রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় দুর্নীতির আঁতুড়ঘর বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক কৌশলে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক ও কমিটি একসাথে সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা রশিদে অর্থ আদায়, ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাত, উপবৃত্তির শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়ম,সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকলে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলামের পদত্যাগসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সুলতান বলেন, ঘুষ-বানিজ্য, পরিত্যক্ত জমি,ছাত্রদের থেকে ফরম-ফিলাপের জন্য কয়েকগুণ বেশি টাকা আত্মসাৎ করে কমিটির লোকজন। প্রধান শিক্ষকের সাথে সম্মিলিতভাবে এই টাকা ভোগ করেন কমিটির সদস্যরা । তাদের এসব অন্যায় এর বিরুদ্ধে আজকে ছাত্ররা ক্লাসরুম পরিত্যাগ করে আন্দোলন করছে এবং আমরাও এলাকাবাসী হিসাবে এসবঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে একত্রিত হয়েছি।
আন্দোলনরত এলাকাবাসী সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুব আলম লাবলু বলেন, সরকারের ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক নির্বিঘ্নে নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। বিদ্যালয়ের দেয়াল নির্মাণ, ৭জন শিক্ষক ২জন দপ্তরি ১জন করে আয়া ও নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে তিনি প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এবিষয়ে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের জমিদাতারা একাধিকবার প্রধান শিক্ষকের সাথে বৈঠক করলেও বিষয়টি তিনি আমলে নেন নি।
আন্দোলনরত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিদ বলেন- প্রধান শিক্ষক কখনো শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করতেন না। এমনকি এসব অনিয়ম নিয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি-ধমকি ও নানাভাবে হয়রানি করা হতো। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। আমাদের একদফা দাবি আমরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই। সমাবেশে আরেকজন নবম শ্রেণির আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তাদের দাবি আমলে নিয়ে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এসব কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং রঘুনাথপুরের সর্বস্তরের জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। তবে ওইদিন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাননি।আন্দোলনে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয়রা বক্তব্যে রাখেন।
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন বিল্ডিং এ সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন অর্পা দাস এবং দীলিপ। প্রধান শিক্ষকের নির্ধারণ করা পরিত্যক্ত এই বিল্ডিং এ সপ্তাহে একদিন জাতীয় সংগীতের চর্চা করাতে হয় বলে আশাহত মতপ্রকাশ করেন অর্পা দাস। এরপর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইব্রাহিম ইসলাম বলেন, সমস্ত টাকা প্রধান শিক্ষকের কাছে। শিক্ষক ও দপ্তরী নিয়োগ এর সময় টাকা নিয়েছেন কিনা জানা নেই। বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির টাকা, জেলা প্রশাসক এর দেয়াল নির্মাণ বাবদ দুই লক্ষ টাকা এসব হিসাব সম্পর্কে সচ্ছল তথ্য প্রধান শিক্ষক নিজেই দিতে পারবে। বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে আমি থাকলেও আমার কাছে রয়েছে সামান্য কয়েক হাজার টাকা। বোর্ড থেকে নির্ধারিত ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা ফরম ফিলাপের জন্য নিয়ে থাকি। উপবৃওির জন্য সকলের তথ্য নিয়ে আমরাই আবেদন করে দেই। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, সরকারি চাকরির জন্য সকলেই টাকা দিয়ে থাকেন এবং এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল সমাজে। আমরা চাই যোগ্যতা ও মেধার মূল্যায়ন হোক।
বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটির সদস্য সোহেল আহমেদ বলেন, তিনজন শিক্ষক একজন করে আয়া ও নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগের সময় আমি কমিটির সদস্য ছিলাম। এদের নিয়োগে কারও থেকে ১৫ তো কারও থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে কমিটির সভাপতি হাসমত মেম্বার, দেলোয়ার হোসেন ও প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম। আওয়ামী লেজুড়বৃত্তিক থাকায় তাদের এসব কাজকর্ম আলোচনায় থাকলেও এলাকাবাসী এতদিন দাবী জানাতে পারেনি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোন যোগে জানতে চাইলে রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম জানান- অযৌক্তিক কারণে তিনি পদত্যাগ করবেন না। অডিট করে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হলে তিনি যেকোনো শাস্তি মেনে নেবেন।তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ব্যক্তি আক্রোশে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।তার স্ত্রীর খাদ্য নালিতে ছিদ্র, এ কারণে তিনি ২দিনের ছুটি নিয়েছেন। আন্দোলন শেষে দুর্নীতির প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা।সঠিক তদন্তের রিপোর্ট অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।