মৃত্যুই ১৭ মামলা থেকে খালাস দিলো মামুন কে
মাসুদ পারভেজ
১৭ বছরের কিশোর মো. ইব্রাহিম। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন পাড়ায় তাকে মামুন নামে সবাই চিনে। বয়সে কিশোর হলেও প্রাপ্ত বয়স্ক অনেক পেশাদার অপরাধীর কাছে সে ছিল অপরাধের ‘গুরু’। তার ক্ষিপ্রগতির ছিনতাই, চুরির কৌশল পুলিশ কর্মকর্তাদেরও অবাক করে দিতো।
কাকতালীয় বিষয় হলো বয়সের সমানই তার মামলার সংখ্যা! অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলেই আইনের ফাঁক গলে ছাড়া পেয়ে যেতো। বের হয়ে আবার জড়াতো অপরাধে।
বৃহস্পাতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী বলেন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইনে ইব্রাহিম প্রকাশ মামুনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা আছে। ট্রেনে কাটা পড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায় মামুন।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সাগরিকা ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়েছিল মামুন। চিনকি আস্তানায় ট্রেন থেকে পড়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পায়। তাকে উদ্ধার করে পুলিশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।
চিকিৎসকরা তার জীবন বাঁচাতে একটি পা কেটেও ফেলেন। রক্ত দরকার ছিল মামুনের, সেটিও দ্রুত ম্যানেজ হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি মামুনকে। মৃত্যুর পাঁচ মিনিট আগেও স্বজনদের সাথে স্বাভাবিক কথা বলেছিল মামুন। একটি পা হারিয়ে হয়তো বাঁচতে চেয়েছিল অপরাধ ছেড়ে। কিন্তু বুধবার (১২ এপ্রিল) মারা যায় মামুন। কোতোয়ালী থানাধীন পুরাতন স্টেশন এলাকায় জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়।
মামুনের মৃত্যুতে আইন অনুযায়ী পুলিশের খাতায় তার নামে থাকা মামলাগুলো থেকে সে খালাস পাচ্ছে। কিন্তু মামুনের অপর দুই ভাই ইমরান, বশির, মা নাসিমা বেগম, বোন তানিয়া, মৌরমী, পিংকিও পুলিশের খাতায় অপরাধী। সবাই বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন।
মামুনের দুর্ঘটনা নিয়ে তার সহযোগীদের বরাতে কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মোমিনুল হাসান বলেন, স্টেশনের রোড়ে চুরি-ছিনতাইয়ে সিদ্ধহস্ত মামুন হয়তো এবার ট্রেনে মোবাইল বা মালামাল ছিনতাই বা চুরি করতে গিয়েছিল। কারণ মামুনের বাড়ি ঢাকা, সাগরিকা ট্রেনটি গন্তব্য চাঁদপুর। তার সহযোগীরা বলছে মামুন ফেনীর উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠেছিল। কিন্তু ফেনী পৌঁছার আগেই ট্রেন থেকে পড়ে যায় বা কেউ ফেলে দেয়।
আহত অবস্থায় রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন মারা যায়।
মামুনের পিতার নাম কলোন মিয়া। ঢাকার শ্যামপুর থানার পোস্তাগোলায় তাদের পৈত্রিক নিবাস। কলোন মিয়া বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান।
কিন্তু মামুনের মৃত্যুর নির্মমতা তার সহযোগীদের অপরাধ থেকে দূরে সরাবে কিনা সেটা সময় সাপেক্ষ বিষয় হলেও তার নামাজে জানাজায় এসে মামুনের জন্য কাঁদতে দেখা যায় সহযোগী—সমবয়সীদের।