মোঃ রাশিদুল হাসান জিহাদঃ আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৬ ডিসেম্বর’২৪ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বশির উদ্দিন খাঁন এর সভাপতিত্বে উক্ত আয়োজনে মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন (সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান , ইংরেজি বিভাগ , শ.স.ক) রেজাউল করিম (সহঃ অধ্যাপক , ইংরেজি বিভাগ , শ.স.ক) এমদাদুল হক ফকির (প্রভাষক , বাংলা বিভাগ , শ.স.ক) সেলিনা পারভীন (উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা , মুক্তাগাছা) পীতেশ চন্দ্র পাল (অতি.উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা , মুক্তাগাছা) লুৎফুন্নাহার প্রীতি ও আবু রায়হান (কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা , মুক্তাগাছা) ডাঃ রাহুল চক্রবর্তী (আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার , উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , মুক্তাগাছা) ডাঃ মাহফুজুর রহমান (ডেন্টাল সার্জন , উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , মুক্তাগাছা) তানভীর আহমেদ (সিনিঃ মৎস্য কর্মকর্তা , মুক্তাগাছা) আনোয়ার পারভেজ লিহন (ভেটেরিনারি সার্জন , মুক্তাগাছা) প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা রেখে অন্যান্য ২৫ ক্যাডারে ৫০% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এবং ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ এর সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। যেখানে বৈষম্যহীন ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংস্কার কমিশনে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ গুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকারের সকল নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রদানকারী ২৬ ক্যাডারে গঠিত ‘সিভিল প্রশাসন’ এ আমূল পরিবর্তন সময়ের দাবি, সেখানে কমিশন সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও বৈষম্যমুলকভাবে ‘উপসচিব পুলে’ ১টি ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা সুপারিশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় সিভিল সার্ভিসের ২৫ ক্যাডারের সকল সদস্যদের ক্ষোভের কারণ বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। শুধু প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক সেবা আইন ১৯৭৫ অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অযুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু ই রাখে নি, উপরন্তু ২০১৮ এর বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনোত্তর এ সকল পদ কুক্ষিগত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারে ২ শতাধিক ক্যাডারে ১ জনের প্রতিনিধিত্বশীল পদ্ধতির পরিবর্তে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ দাবি করে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির স্বচ্ছতার উপর প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ লিহন এর সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচিতে শ.স.ক. অধ্যক্ষ প্রফেসর বশির উদ্দিন খাঁন বলেন, নিষ্পেষিত সমাজ ব্যবস্থা উত্তরণে বৈষম্যমুক্ত ‘ছাত্র-জনতা’র রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে সুষম ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থাপনাসহ বন্টন নামা প্রনয়ণ করতে চাই। তিনি বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’র অনুধাবন ও আত্মত্যাগের প্রেক্ষিতেই আজকের বাংলাদেশে সব ধরনের বৈষম্য দূর করার নিমিত্তে আন্দোলন অব্যাহত রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা সিনিঃ মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পর থেকেই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক যৌক্তিক আন্দোলনকারী দল বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান কে ‘বিকল্প সরকার’ মনে করে বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় অপ্রতুলতা ও সুবিধার দিক থেকে বৈষম্যের কারনে আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, যাঁদের নিরলস পরিশ্রম, কৃষক ও খামারিদের সাথে মেধাভিত্তিক সার্বিক সমন্বয়ের ভিত্তিতে গ্রামীণ ও কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে, সে-ই আমরা পরিকল্পিত বৈষম্যের শিকার! আমরা ন্যায্য,সময়োপযোগী, জনস্বার্থে যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে এহেন অচলাবস্থা’র নিরসন ঘটাবোই। এর আগে এক প্রশ্নের উত্তরে শ.স.ক. এর বাংলা বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিম ফকির বলেন, ২৪ সালের ‘ডামী’ নির্বাচন ই সকল আন্তঃবৈষম্য সৃষ্টির মূল কারণ! দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেখানে আমরা শিক্ষকরা নীতিমালা প্রনয়ণ করবো, সেখানে ‘অশিক্ষকরাই’ আজ জগদ্দল পাথরের ন্যায় বসে আছে! পরিষদ যৌক্তিক কারণে আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
একটি উন্নয়নশীল দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, সার্বিক অবক্ষয় ও বৈষম্য নিরসন ও পিছিয়ে পড়া অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিকল্পে ‘কোটা নয় মেধা’, ‘বৈষম্য আর দুর্নীতি নয়, সুষম বন্টন আর সমন্বয়’ এর ভিত্তিতেই কার্যকর রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।