মোঃ শামীম হোসেন - খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। শুভ মহালয়ায় চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে পৃথিবীতে আসার আহ্বান জানানো হয়। শনিবার সকালে দেশের সব মন্দিরে নানা আনুষ্ঠানিকতায় মহালয়া পালিত হয়। দেবীপক্ষের সূচনার মধ্য দিয়ে মঙ্গলঘট স্থাপন করে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়। ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দুর্গার বোধনের মাধ্যমে মূল পূজা শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হবে। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী-মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়ানী মুণীর কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমনের সময়ই দুর্গোৎসব। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, মহালয়া তিথিতে হিন্দুরা তাদের তিন পুরুষের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেওয়া হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষে মানুষে হƒদ্যতার যে সম্পর্ক, দুর্গাপূজায় সেই বার্তাই আরও জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, আজ ভারতবাসীও দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে। আশা করব, দুই দেশের মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্গাপূজা মহাসমারোহে উদ্যাপন করবেন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজায় পুরহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, কৈলাসে ফিরবেনও ঘোড়ায় চড়ে। শাস্ত্রমতে, এর ফলাফল ‘ছত্রভঙ্গ স্তুরঙ্গমে’। এর অর্থ হলো, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে ঘটবে অস্থিরতা। রাজনৈতিক উত্থানপতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যু বাড়বে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, আমাদের বাঙালির সামনেও চ্যালেঞ্জ অনেক; আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি রয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনেও ভুক্তভোগী আমরা। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের এবার কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, আমদানিনির্ভরতা দ্রুত কমাতে হবে। পাশাপাশি হতদরিদ্র, দীন মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা আয়োজিত হবে। গত বছরের চেয়ে এবার ২৪০টি বেশি পূজা হবে। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শনিবার সকালে বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপে মহালয়ার আয়োজনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের সামর্থ্য ও সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বিধানের কারণে প্রতিবছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ছে।