বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দেশব্যাপী উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই প্রতিপক্ষের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে বেড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু'র বিরুদ্ধে।
পাবনা ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন বিজয়ী চেয়ারম্যান বাবুর নির্দেশে গত ৮ মে তার সমর্থক নাটিয়াবাড়ি রাজনারায়ণপুর এলাকার মৃত সাহানুরের ছেলে শফিক (৪০), মৃত যদু শেখের ছেলে কামরুল (৪২),
মৃত তারা শেখের ছেলে বিল্লু (৪২), মৃত আব্দুল হাই'র ছেলে চঞ্চল মেম্বর, রফিকুল ইসলামের ছেলে সোহাগ (৩০)সহ তাদের দলবল সাবেক এমপি আরজু'র বাড়িতে শত শত পটকা বোমা নিক্ষেপ করে। তিনি সে সময় বাড়িতেই ছিলেন।
এসময় তারা এমপি'র বাড়ির কেয়ারটেকার বাবু ওরফে (পান বাবুকে) মারপিট করে। বিভিন্ন সময়
এমপি আরজু'র সমর্থক কর্মীদের হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছারা করেছে।
নগরবাড়ি বসন্তপুর গ্রামের নজির সেখের ছেলে লিমন শেখ (৩৬), মৃত গফুর শেখের ছেলে ভুক্কা (৪৫) ও রুস্তম আলীর (৫২) নেতৃত্বে ফজলু (৪০), হায়দার (৪৫) ও রেজাউল ৩৮) রাজনারায়ণপুর বটতলা, সাধু বাজার চর কান্দি, সিংঘাসন ও শিমুলিয়া পর্যন্ত একই কায়দায় মারপিট, হুমকি - ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এলাকা পুরুষশূন্য করেছে।
ভুক্তভোগী সাবেক এমপি আরজু'র ব্যবসায়িক পার্টনার বাবলু মন্ডল (৫৫) কে আরজু'র ব্যবসায়িক অংশ নগরবাড়ী এলাকায় ছানু মাদবর ও তার তিন ছেলে হাশেম, রওশন, মোয়াজ্জেম ও তার ভাতিজা মৃত আব্দুল মান্নান মানুর ছেলে মামুনকে লিখে দিতে ও ৯ মে থেকে হিসাবের জমা-খরচ ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে লিপিবদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করে।
বাবলু মন্ডল এ কাজে সম্মত না হওয়ায় অভিযুক্তরা তার সমস্ত জাহাজের মাল উঠানামা ও দোকান বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে থানায় অবহিত করলে ওসি তদন্ত বাবলু মন্ডলের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে এবং অভিযুক্ত তিনজনের মোবাইল নম্বর নিয়ে যান এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস প্রদান করেন। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তার মালামাল উঠানামা বা চালু হয় নাই এবং তাদের বিরুদ্ধে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানা যায় নাই।
তিনি আরও বলেন ৯ তারিখ সকাল থেকে নগর বাড়ি ঘাটের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী ইমান আলী'র মালামাল জাহাজ থেকে খালাস ও তার নিজস্ব ক্রেন বন্ধ করে দিয়েছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। যা গত ১১মে সুজানগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করে সত্যতা দেখতে পান। তিনি সেখানে মৌখিকভাবে বলে আসেন মালামাল ওঠা নামায় যেন কোন বাধা দেয়া না হয়। সাবেক এমপির ব্যবসায়িক বিষয়টি তিনি অবহিত না হওয়ার কারণে সে ব্যাপারে কিছুই বলেননি। তবে তিনি ইমান আলীর চাচাতো ভাই জিলালকে মামলা দায়েরের জন্য সাথে নিয়ে যান। নগরবাড়ি ঘাটের টিন ব্যবসায়ী সংকর শীলের দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
ভাটিপাড়া, রূপপুর ইউনিয়নের বাঁধেরহাট থেকে কাজিরহাট, সুদুর শিমুলিয়া পর্যন্ত তারা সন্ত্রাসী রাজ্য কায়েম করেছে। তারা মাসুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুর রহমান শহীদ তার দুই ছেলেসহ তার অনুসারীদের বাড়িছাড়া করেছে।
রূপপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জ্বল'র হিন্দু অধ্যুষিত শীতলপুর গ্রাম, রতনগঞ্জ ও রূপগঞ্জসহ অনেক এলাকা জুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
এক কথায় সাবেক এমপি আরজু'র অনুসারীদের ওপরে সকল আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
বেড়া প্রতাপপুর এলাকার জিয়াউর রহমান জিলাল (৪৬) মুঠো ফোনে বলেন নবনির্বাচিত বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুর অর্ধশত সন্ত্রাসী ও ডাকাত বাহিনী ২০ - ২৫ টি মোটরসাইকেলে এসে নগরবাড়ি ঘাট, পুরান ভারেঙ্গা, রঘুনাথপুর ও প্রতাপপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তান্ডব চালায়।
বৃহস্পতিবার ৯মে রাত ৮টায় ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার এবং আমার বাড়ির আশেপাশের সকল বাড়িতে আক্রমণ করে চার পাঁচজনকে যখন করেছে। বাড়ির টিনে কোপ দিয়ে টিন কেটে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে থানায় কোন মামলা করেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে জিলাল বলেন ওইদিনই ঘটনার পর রাত ১ টার দিকে আমিনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। পুলিশ তদন্তে এসেছিল। কিন্তু এখনো কোনো মামলা হয়নি। আমরা জান মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে এলাকার বেশিরভাগ পুরুষ পলাতক আছে। মহিলারা বলছেন সন্ত্রাসীরা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। ভয়ে পুরুষেরা কেউ বাড়িতে আসতে পারছেননা।
জিলালের স্ত্রী রীতা পারভিন (৩৯) বলেন রেজাউল হক বাবু বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সময় আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। তাই ভোটে জিতেই সে প্রতিশোধ নিতে আমাদের উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না।
মৃত কাশেম শেখের ছেলে ভুক্তভোগী ফরিদ শেখ বলেন ওরা ২০-২৫ টা মোটরসাইকেল যোগে এসে কয়েক রাউন্ড গুলি করেই কোপ আর বাড়ি শুরু করে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। ওরাও আওয়ামী লীগ করে, আমরাও আওয়ামী লীগ করি। ওরা বিএনপি'র সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে আমাদের উপর আক্রমণ করেছে। আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে ও কর্ম করতে পারছিনা।
এছাড়া ঐ এলাকার জিন্নাহ শেখ এর মেয়ে জোহরা খাতুন (৩৫), মৃত মোকসেদ মিয়ার ছেলে আব্দুল আউয়াল মিয়া (৫০), আউয়াল মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন (৪৩), বিল্লাল শেখের মেয়ে শিক্ষার্থী বিথী খাতুন (৪০) সহ অনেকেই চেয়ারম্যান বাবু'র সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন নাটিয়াবাড়ি মেরিটাইন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, বংগা দিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সহকারী প্রধান শিক্ষক, সাংনাটিয়াবাড়ির মৃত আশরাফ আলী খান'র ছেলে
আকতার খান (৫৩) ও একজন কলেজের অধ্যাপককে মারধোর করা হয়েছে। মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।
এছাড়াও নগর বাড়ি ঘাটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিরব চাঁদাবাজি করছে। এর প্রতিবাদ করায় এক পর্যায়ে রঘুনাথপুর জিলালের বাড়িতে আক্রমণ চালায় বাবু।
নগরবাড়ি ঘাট বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা। এই ঘাট বসুন্ধরা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, পার্টেক্স গ্রুপ, নোয়াপাড়া ট্রেডিং, মেরিন একাডেমি, পোর্টের জনবলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ দ্বারা সুসজ্জিত। এটি দেশের অর্থনীতির একটি বড় ব্যবসায়ী এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর নৈরাজ্যে এই ঘাটটি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। তারা এখানকার ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাহীনতার প্রতিকার হিসেবে পুলিশ র্যাবসহ প্রশাসনের সকল স্তরের সুদৃষ্টি কামনা ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী করেন।
চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবুকে বারবার মুঠোফোনে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
পাবনার বেড়া রাজ নারায়নপুর জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন নির্বাচনের পরে যে সহিংসতা হচ্ছে আমি তার নিন্দা জানাই। জনগণ যাকে ভোট দেবেন সেই বিজয়ী হবেন। যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি সামনে যাতে আরো ভালো কিছু করতে পারেন আমি সেই দোয়া করি। আজকে যে ঘটনা ঘটে গেছে আমি চাই এখানেই এর সমাপ্তি হয়ে আর যেন নতুন করে কোন ঘটনা না ঘটে।
সুজানগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষ ঘটেছে। খবর পেয়ে আমি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারা দিয়েছেন, তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশি প্রটোকল এখনো জারি আছে। পুলিশ সব সময় টহলরত আছে।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন দুই পক্ষই অভিযোগ দিয়েছেন তদন্ত চলছে।