বিদ্যুৎ নিয়ে কেন জবাবদিহিতা নেই?
মো: ওমর ফারুক
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং সরবরাহের উন্নয়ন সত্যিই দৃশ্যমান।
বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের পরিশোধ করা অর্থ গেলো কোথায়?
কয়েক যুগ ধরে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকা একটা দেশ সুদান। সেখানে প্রাসাদসম একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাংলাহাউজ করা হয়েছিল।
সেই সুবাদে সুদানের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম।
প্রিপেইড মিটার,
আগে থেকেই অর্থ লোড করে রাখবেন।
৫০০০ টাকা লোড করলে যতক্ষণ টাকা থাকবে ততক্ষণ এক সেকেন্ডের জন্যও আপনার বাড়ির বিদ্যুৎ বন্ধ হবেনা।
আজ অর্থ লোড করেছেন? সারাদিন এসি, ফ্যান, মটর, ফ্রিজ অন রেখে ৫ দিনেই শেষ করতে পারবেন আবার সাশ্রয়ীভাবে চালিয়ে ৫০ দিনও চালিয়ে যেতে পারবেন।
বিল আসবে না।
মিটার রিডার আসবেনা, জরিমানা হবেনা , লোডশেডিং বলে কিছু নেই, এককথায় কোনো ভাওতাবাজী
নেই।
কারণ বিদ্যুৎ সরকার উৎপাদন করছে নিজস্ব টাকা দিয়ে আমি তা ব্যবহার করছি।যতক্ষণ আমার মিটার কার্ডে টাকা ব্যালেন্স আছে ততক্ষণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবো।
ওখানকার বা সুদানের ইঞ্জিনিয়ার গুলো বা প্রশাসনিক ব্যক্তিরা কোথায় লেখাপড়া করেছে?
তারা এভাবে সিস্টেম করতে পারলে এদেশের সিস্টেম ওভাবে করা যায় না কেন?
ডিজিটাল আইন চালু করে প্রতিবাদ বন্ধ করে জনসাধারণকে বলাতকার করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাবে?
কেন কয়লা কেনার অর্থ নেই?
যেসব কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলো কারা?
বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কি গ্রাহকেরা বিল পরিশোধ করেনি?
তাহলে বিলের অর্থ কোন খাতে খরচ করা হয়েছে?
বিদ্যুৎ শুধু ফ্যান, এসি চালিয়ে আরামে ঘুমানোর জন্য তো না।
আমার লাইভস্টক ফার্ম ডিম হ্যাচিং থেকে শুরু করে মাংস উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দরকার।
আজ ১ :১ = ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ : ১ ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
ড্যামেজ পণ্যের দাম কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তার পকেট থেকে কেটে সমন্বয় করা হবে। ফলে দাম বেড়ে যাবে।
বিদ্যুৎ নেই অজুহাতে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা অলস পার হচ্ছে।
শ্রমিক তার নির্ধারিত ৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলে সে চলে যাবে।
কিন্তু কারখানায় কাংখিত উৎপাদন হয়নি।
ওভারটাইম করিয়ে উৎপাদন করলে খরচ বেড়ে যাবে।
ওভারটাইমের সময়ও লোডশেডিং হইলে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে উদ্যোক্তা পুজি হারিয়ে পালাতে বাধ্য।
ধান্দাবাজি আর চাপার জোরে মাইকের সামনে অনেক গল্প শুনানো যায় কিন্তু অরিজিনাল সিস্টেম অনুযায়ী কাজ করাতে বুদ্ধিমত্তা এবং দূরদর্শী দৃষ্টি থাকা আবশ্যক।
আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যা বলছে, জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত পেশাদার ব্যাক্তিরা যখন বিবেক হারিয়ে তেলবাজি করে ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হয় তখন একটা জাতি চরম ভুক্তভোগী হয়।
জাতীয় লেভেলের অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোকে অগ্রাধিকার দিলে আজ এই উন্নয়ন দেখতে হতো না।
বেতাগা এবং মাসকাটা কালিতলায় দুইটা রাইস মিলে নারী, পুরুষ, শিশু মিলে অন্তত ৪০/৪৫ জন মানুষকে তাদের ধান নিয়ে বসে থাকতে দেখে আসলাম।
তাদের মধ্যে অনেকে ধান মিলিং করে চাউল নিয়ে গেলে বাড়িতে ভাত রান্না হবে।
গতকাল থেকে সিরিয়াল দিয়ে আছে কেউ কেউ কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট ঘটায় এখনো কাজ সমাধান করতে পারেনি।
((বাড়িতে চাউল নেই)) একজন শিশুর মুখে বা একজন মানুষের মুখে এই কথাটি কতটা মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক তা একবার বিবেক দিয়ে ভেবে দেখুন।
অনেক জ্ঞানী গুনী মানুষেরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে দেশ বা বিভিন্ন সেক্টর পরিচালনা করে। তাদের যোগ্যতা এবং পরিকল্পনা প্রশ্নবিদ্ধ।
বড় বড় উন্নত দেশের উদাহরণ টেনে ছেলেভুলানো গল্প শুনানো হচ্ছে অথচ পাশের ছোট ছোট দেশ গুলোর কথা কখনো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়না।
নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার বা অংগরাজ্য পশ্চিমবংগের বিদ্যুৎ সরবরাহের উদাহরণ কখনো শুনানো হয়না কেন?
বিভিন্ন পর্যায়ে কি তাহলে মাথামোটা তেলবাজ লোকজনকে বসিয়ে রাখা হয়েছে?
অভিনেতা, রক্তচোষা ব্যাবসায়ী, ধান্দাবাজ, তেলবাজ, রাস্তার নায়িকা, রাস্তার গায়িকা এসব যখন নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় থাকে তখন যুগ যুগ ধরে রাজনীতি করা অভিজ্ঞ দূরদর্শী নেতারা সর্বোচ্চ উপজেলা চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত গিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হয়।