বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ বরণের প্রাণের উৎসব “সাংগ্রাই” ও মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসব
মাসুদ পারভেজ
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জমকালো আয়োজনে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ বরণের প্রাণের উৎসব “সাংগ্রাই”। জেলার ৭টি উপজেলায় বর্ষবরণের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এখন সাজসাজ রব। মৈত্রী পানি বর্ষণের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে স্বাগত জানানো হবে নতুন বছরকে।
এদিকে প্রতিবছরের মত মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসবকে ঘিরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবান সাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা শহরের রাজার মাঠ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীরা বৈচিত্রময় ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করে। এসময় মারমা, চাকমা, ম্রো, ত্রিপুরা, চাকসহ ১১ টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি সম্প্রদায়ের সাথে অনেক বাঙালীও অংশগ্রহন করে।
বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংগ্রাই উৎসবের শুভ সুচনা করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি। এসময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো.তারিকুল ইসলাম,জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো.লুৎফুর রহমান, বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার নার্গিস সুলতানা, বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ইনস্টিটিউট এর উপ পরিচালক মং নু চিং মারমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষিপদ দাস, সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সদস্য সিং ইয়ং ম্রো, সদস্য কাঞ্চন জয় তংচঙ্গা, সদস্য সত্যহা পাঞ্জি ত্রিপুরা, সদস্য তিং তিং ম্যা, সদস্য ফাতেমা পারুল, বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাইলং মারমা, রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যঅংপ্রু মারমা, কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান মংপু মারমা, ৩নং বান্দরবান সদর ইউপি চেয়ারম্যান অংসাহ্লা মারমা, ৪নং সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা, ৫নং টংকাবতি ইউপি চেয়ারম্যান মাংয়াং ম্রো প্রদীপ, ৬নং জামছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যসিং শৈ মারমা, সহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্ধরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আগামীদিনে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
পরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটে আয়োজন করা হয় এক বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। আর এসময় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় অনুষ্টানে বয়োজ্যেষ্ঠদের বরণ করে নেয় তরুন তরুনীরা,আর এরপরই তাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে প্রদান করা হয় নানা রকম দানীয় বস্তু।
বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই বলেন, আগামী ১৪এপ্রিল দুপুরে সাংগু নদীর পাড়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, রাতে পাড়ায় পাড়ায় পিঠা উৎসব, ১৫ এপ্রিল রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মারমা সম্প্রদায়ের এই এতিহ্যবাহী এবারের সাংগ্রাই উৎসবের।
মৈত্রি পানি বর্ষন উৎসবের সময় তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। তরুণীদের সামনে বিভিন্ন পাত্রে বা জলাধারে জল রাখা থাকে। এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়।
পাহাড়ের চাকমা সম্প্রদায়রা এই উৎসবকে বিঝু, মারমা’রা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে “বৈসাবি”। মারমা সম্প্রদায়ের কাছে বর্ষবরণের এই উৎসব “সাংগ্রাই” নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, বান্দরবান জেলা শহরে শনিবার মধ্যরাতে এই উৎসবের ইতি টানা হলেও, জেলার উপজেলা গুলোতে ১৭ এপ্রিল শেষ হবে মারমাদের বর্ষবরণের সাংগ্রাই অনুষ্ঠান।