বাড়তি চাপ শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতাকে মেরে ফেলে—নওফেল
মাসুদ পারভেজ
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমাদের অভিভাকরা ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বাড়তি চাপ প্রয়োগ করেন। এই চাপ সৃষ্টিশীলতাকে মেরে ফেলে। তাইতো আমাদের অনেক জানা থাকে কিন্তু আমরা আবিষ্কার করতে পারি না। ব্যাপারটা হলো- আমরা বই পড়ে একটা গাড়ি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম কিন্তু আমরা তা চালাতে পারি না! তাহলে সেই জানা কোন ফলাফল দিবে না। আমাদের শিক্ষা হতে হবে এমন যেটা ফলাফল বয়ে আনবে। আর সেই পথেই আগাচ্ছে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) এলজিইডি মিলনায়তনে জেলা পরিসংখ্যান অফিসের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ট্যাবলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এসব কথা বলেন।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরের সরকারি ও এমপিও ভুক্ত স্কুলের ৪৫০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে মোবাইল ট্যাবলেট বিতরণ হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১ম ধাপে ৯ হাজার ৮ শত মোবাইল ট্যাবলেট বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
উপমন্ত্রী বলেন, আগে খুব ভাল ভাল স্কুল ছিল কিন্তু সাধারণ মানুষের পড়ালেখার সুযোগ ছিল না। একসময় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরাই এসব স্কুলে পড়ালেখা করতো। তারা ভাল সুযোগ সুবিধা পেত। পক্ষান্তরে সাধারণ পরিবারের সন্তানরা ভালো স্কুলও পেত না, শিক্ষাও পেত না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছেন। এরই অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এ স্মার্ট ডিভাইস দেওয়া হচ্ছে। এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারবে।
মুখস্ত একটি মানসিক নির্যাতন—এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুখস্তবিদ্যা কার্যকরী নয়। এটি মানসিক নির্যাতনের মতো। এটি শিক্ষার্থীদের অসস্তিতে ফেলে। আমাদের পড়াশোনাটাকে উপভোগ করতে হবে। বাস্তবতার সাথে মিল রেখে পড়াশোনা করতে হবে। বিদ্যালয় পর্যায়ে খুব ভালো ফলাফল করে উন্নতি নাও হতে পারে। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যারা বিদ্যালয়ে ভালো ছিলেন না। তাই আমাদের শুধু পাঠ্যবই মুখস্থের ওপর জোর না দিয়ে এটাকে উপভোগ করতে হবে, বাস্তবধর্মী জ্ঞান আহরণ করতে হবে। আর এসবের সমন্বয়ে সামনে আমাদের নতুন কারিকুলাম আসছে।
বাড়তি চাপ শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতাকে মেরে ফেলে—নওফেল 1
নওফেল বলেন, স্মার্ট সিটিজেন তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত স্মার্ট ডিভাইস শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন বুঝার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। অনলাইন ভিত্তিক নানা ধরনের কোর্স শেখার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরো আনন্দদায়ক করে তুলবে। পাশাপাশি মোবাইল ট্যাবলেট স্মার্ট সিটিজেন বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
তিনি ট্যাবলেট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা এই ডিভাইস অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। অন্যরাও যাতে এটি ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারে সে সুযোগ দিবেন। দলবদ্ধভাবে শেখার মধ্যে আনন্দ আছে। শুধুমাত্র নিজে ভাল ফলাফল করার মানসিকতা নিয়ে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না। স্বার্থপর শিক্ষার্থী বড় হয়ে স্বার্থপর পেশাজীবী বা চাকুরিজীবী হবে। তখন সে মানুষের স্বার্থের কথা বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাই শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফল করার পাশাপাশি ভাল মানুষ হতে হবে। যে পিছিয়ে আছে তাকে এগিয়ে দিতে হবে।
ভালো শিক্ষার্থী হলেই সফল মানুষ হওয়া সম্ভব নয় এমন মন্তব্য করে উপমন্ত্রী আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে সফল হতে হলে পড়াশোনার পাশাপাশি দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকার বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীকে চাকুরি দিতে পারবে না। তাই যার যার স্থান থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।
উপমন্ত্রী বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলাকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু বাংলার পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই ইংরেজি শিখতে হবে। ইংরেজি ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য সম্ভব নয়। আমাদের ইংরেজির চর্চা বাড়াতে হবে। ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অনেকে ইংরেজি বলতে গিয়ে একসেন্ট বা গ্রামারের বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, যা কোন সমস্যাই না। সেইসাথে আমাদের বাংলাকেও আরও ভালোভাবে জানতে হবে। ছেলে মেয়েদের প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহী করতে হবে। তবেই আমরা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে এগিয়ে যেতে পারবো।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান, জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী, শিক্ষক হোসেন আহমেদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।