মোঃ রাশিদুল হাসান জিহাদ, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আড়াই শত বছরের ঐতিহ্যের ২৬৫ তম হুমগুটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) শেষ বিকেলে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার তেলিগ্রাম বড়ই আটায় তালুক-পরগনার সীমানায় অনুষ্ঠিত হয় এই হুমগুটি খেলা।
পৌষ মাসের শেষ দিনকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় পহুরা। প্রায় দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই খেলা বছরে একবার একই স্থান থেকে শুরু হয়। পিতলের তৈরি ২০কেজি ওজনের গুটি আয়ত্ত করে নিজ গ্রামে নিয়ে গুম করা পর্যন্ত চলে এই খেলা।
আর এই খেলাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লেগে থাকে আত্মীয়-স্বজনের ভীড়। পুরো এলাকার পরিবেশ হয়ে উঠে উৎসাহ উদ্দীপনা মূখর। ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া সড়কের লক্ষীপুর ও দশ মাইলের মাঝামাঝি বড়ই আটা বন্দ (খোলা মাঠ) খেলার কেন্দ্রস্থল।
এ দিন সকাল থেকে ফুলবাড়িয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল, মুক্তাগাছা উপজেলার লোকজন আসতে থাকে বড়ই আটা বন্দে। ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে তেলীগ্রামে বড়ই আটা বন্দ। খেলা শুরুর আগে ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের অদূরে ভাটিপাড়া, বালাশ্বর, তেলিগ্রামের সংযোগস্থল নতুন সড়কে লক্ষ লক্ষ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতিকাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের ভূখন্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য তেলীগ্রাম বড়ই আটা নামক স্থানে (যেখানে শুরু তালুক পরগনার সীমানা) সেখানে এই গুটি খেলার আয়োজন করে। গুটি খেলার শর্ত ছিল, গুটিটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। জমিদার আমলের গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হয়। আজও তালুক পরগনার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদারি খেলার গোরাপত্তন। আমন ধান কাটা শেষ, বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এই পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
হুমগুটি খেলাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়িয়ায় মেতে উঠে লক্ষাধিক মানুষের মিলন মেলা। ২০ কেজি ওজনের পিতলের গুটি ঢাক ঢোলের তালে তালে নেচে গেয়ে তালুক পরগনার সীমানায় নিয়ে আসে এলাকাবাসী। খেলা শেষ করার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যে এলাকায় গুটি গুম করা হয় তারা হয় বিজয়ী।
এসময় হুমগুটি খেলা শুভ উদ্বোধন করেন- জাতীয় সংসদ সদস্য আ. মালেক সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা, অফিসার ইনচার্জ ওসি রাশেদুজ্জামান রাশেদ, ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন নিশী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান রবি,আ.লীগ নেতা এজিদুল প্রমুখ।
আলহাজ্ব মোঃ আ. মালেক সরকার এমপি বলেন, আমি এ খেলা সংসদের উপস্থাপন করব। হুমগুটি খেলাটি যেন জাতীয় খেলা হয়।