প্রশাসনকে ঘুমে রেখে আনোয়ারায় চলছে মাটি কাটার মহোৎসব।
~আতিকুল হা-মীম (আনোয়ারা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম)
কে বি ডব্লিউ ব্রিকসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সাংবাদিক ও প্রশাসনকে সিস্টেম করে রেখেছি। মাটি না কাটলে ইট কিভাবে বানাবো। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বৈরাইয়া গ্রামে রাত দিন চলছে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শতশত বিঘা কৃষি জমি, পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে।শীতকাল শুরু হলেই ব্রিক ফিল্ড মালিকদের শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে মানচিত্র থেকে উধাও করে দিচ্ছে কৃষি জমি।এদিকে গত তিন দিন ধরে প্রশাসনকে ঘুমে রেখে কৃষিজমির এসব মাটি যাচ্ছে এম বি এম ব্রিক ফিল্ড ও কে বি ডব্লিউ ব্রিক ফিল্ড নামের এই দুই ইট ভাঁটায়।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে সেই গভীর রাতে বটতলী পরিবিল ও দক্ষিণের বিল থেকে ৯টি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে চলে যায় মোহছেন আউলিয়া ও কে বি ডব্লিউ ব্রিকসে। অন্তত ১০০টি ট্রাক এ মাটি বহনের কাজে নিয়োজিত। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই দুই ইট ভাটার মধ্যে এম বি এম ব্রিকসের মালিক শামসুল আলম নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এই শামসুল আলমের এম বি এম ব্রিকসের অনুমোদন এখনো পরিবেশের কাটগড়ায়।প্রবল ক্ষমতাশালী এই ব্যক্তি পরিবেশে আইনের কোনো তোয়াক্কাই করেন না। শীত আসলেই শুরু করে মাটি কাটার মহোৎসব। এছাড়াও কে বি ডব্লিউ ব্রিকসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সাংবাদিক ও প্রশাসনকে সিস্টেম করে রেখেছি। মাটি না কাটলে ইট কিভাবে বানাবো। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।রবিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার ফলে কোথাও কোথাও ফসলি জমি পুকুর সমান গভীর হয়ে আছে। ট্রাক আসা-যাওয়ার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামীণ বিভিন্ন রাস্তাও। এই দুই ব্রিক ফিল্ডের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা রাস্তাও ধ্বংস হচ্ছে। এসব রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে এলাকাবাসীর।স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যেসব জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে তার পাশের জমিগুলোতেও কয়েক বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। আমরা এই দুই ইটভাঁটা মালিক গুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।৪নং বটতলী ইউনিয়নের হলদিয়া পাড়া এলাকার শামসু ইট ভাঁটা করলেও তিনি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেননি। তার ভাঁটার কারণে শুধু পরিবেশের ক্ষতিই হচ্ছে না, ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় পুরো কৃষিব্যবস্থা। গত ৫ বছরে নির্বিচারে মাটি কাটায় জমি এখন খাল-বিল-পুকুরে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে অবৈধ এই ইট ভাঁটায় অভিযান পরিচালনা করে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াছমিন। এ সময় পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ঠিক করে দেওয়ার জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
তিন ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে এই দুই ব্রিক ফিল্ড কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার ফোনে কথা বলতে চাইলেও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, বিষয়টি খবর নিয়ে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।