বাবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি: আজ মুক্তাগাছায় দুর্নীতিবাজদের বিবেকের কাছে ১৪ বছর বয়সী ছোট্ট মারিয়া প্রশ্ন করেছেন- ‘তোমার ঘৃণিত অপরাদের বোঝা নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের কেন বয়ে বেড়াতে হবে? যে সমাজ তুমি রেখে যাচ্ছো তা কি আমাদের বসবাসের যোগ্য? তুমি হাজারো নিষ্পাপ শিশুর জন্য গর্হিত দুর্নীতির পথ তৈরী করে যাচ্ছো, ক্ষমা পাবে কি?’ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার ‘স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন: তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় তিনি এ উক্তি করেন। সভাটি আয়োজন করে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) মুক্তাগাছা’র ইয়েস গ্রæপ। মুক্তাগাছার পৌর পাঠাগার মিলনায়তনে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার তরুণেরা অংশগ্রহণ করে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে তাদের মতামত ও ভাবনা তুলে ধরেন।
৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসফিয়া বলেন, ‘আমি নিশ্চয়ই দুর্নীতির সবক শিখে জন্ম গ্রহণ করিনি। এই সমাজের কিছু ঘৃণিত মানুষ পদে পদে আমাদের শিখাচ্ছেন- দুর্র্নীতি একটি স্বাভাবিক বিষয়। সুতরাং তুমি কেন এ থেকে বিরত থাকবে? আসফিয়া আরও বলেন, প্রথমে আমি নিজে থেকে শুরু করতে হবে। পরিবারকে এই অন্যায় থেকে বিরত রাখতে আমরা তরুণরা মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার মত তরুণদের সচেতন হতে হবে, একটি প্লাটফর্মে এসে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের মগজে জানান দিতে হবে যে, জেগে উঠেছে তরুণ সমাজ- এবার তোমাদের পিছু হঠতেই হবে।’ অন্যদিকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসিবুলের মতে, সংবাদকর্মীদের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে। তার মতে, সাংবাদিকরা গোপনীতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে সত্য প্রকাশে অনড় থাকলে স্বয়ক্রিয়ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দুর্নীতি হ্রাস পাবে। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার অনুরোধ জানান।
জানা যায়, উক্ত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী তরুণেরা ছিলেন তথ্য অধিকার বিষয়ক ক্যাম্পেইনের কুইজে বিজয়ী। শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ ও সর্বস্তরের পেশার মানুষকে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ বিষয়ে সচেতন এবং এই আইনের সফল প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উক্ত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন ও সনাক-মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছা প্রেসক্লাব, মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়, হাজী কাশেম আলী মহিলা কলেজ, গাবতলী ডিগ্রি কলেজ, আব্বাছিয়া কামিল মাদরাসা, হামিদা সুলতানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নগেন্দ্র নারায়ণ বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নবারুন বিদ্যানিকেতন, দুল্লা ও ঘোঘা ইউনিয়ন পরিষদে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রদান ও কুইজ প্রতিযোগিতা করা হয়। প্রতিটি ভেন্যুতে প্রোগ্রামের শুরুতে অংশগ্রহণকারীগণ স্বেচ্ছায় দুর্নীতিবিরোধী শপথ করেন। উক্ত ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য চেয়ে আবেদন ফরম পূরণ প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়।
উক্ত ‘তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাকের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মো: এখলাছুর রহমান জুয়েল। এছাড়া পুরস্কার বিতরণী পর্বে সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি অধ্যাপক মো: আব্দুস সবুর। সনাকের সহ-সভাপতি একেএম মাহবুবুল আলম রতন, কাজী মনিরা তরফদারসহ সনাক সদস্যবৃন্দ, ইয়েস সদস্যবৃন্দ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আলোচনা সভা শেষে কুইজে বিজয়ী ১১৪ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।