সুনামগঞ্জের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওর। কয়েকদিন পরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এই হাওরে ঘুরতে আসবেন। পর্যটকদের হাওরের সৌন্দর্য ঘুরে দেখানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বিলাসবহুল হাউজবোট। তবে অবাধে হাওরের বুকে হাউজবোট চলাচল করলে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ঘোরার জন্য নতুন করে অর্ধশত বিলাসবহুল হাউজবোট তৈরি করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোটমালিক, কর্মচারী ও কারিগররা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাস থেকেই টাঙ্গুয়ার বুকে শতাধিক বিলাসবহুল হাউজবোট চলবে। এ বোটগুলো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
সরেজমিন দেখা গেলো, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সাহেববাড়ি এলাকার সুরমা নদীর পাড়ে হাউজবোটগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কেউ বোটের বাইরের দিকে রং-তুলির আঁচড় দিচ্ছেন, কেউবা ভেতরে ধোয়ামোছা করছেন আবার কেউ দ্রুত বোট তৈরির কাজ শেষের জন্য কারিগরদের তাগাদা দিচ্ছেন। এককথায় এ যেন পর্যটক আকর্ষণের প্রতিযোগিতা চলছে।
বোট মালিক একরাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবছর প্রায় শতাধিক হাউজবোট পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিটি বোট নির্মাণে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত অন্যতম সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝর্ণা এসে মিশেছে। যার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। তবে হাওরের বুকে অবাধে বিলাসবহুল হাউজবোট চলাচল, পর্যটক নিয়ে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, খাবারের উচ্ছিষ্ট, মলমূত্র, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ফেলায় দিনদিন হাওরের জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটকরা হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসুক। কিন্তু বিলাসবহুল হাউজবোটগুলো যদি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে টাঙ্গুয়ার হাওর একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রতন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর টাঙ্গুয়ার হাওরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে হাউজবোট চলছে। ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। এদিকে প্রশাসনের আরও নজর দেওয়া উচিত।
আরেক বাসিন্দা আব্বাস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক আসুক তা আমরা চাই। তবে পর্যটকদের হাওরে নিয়ে যে হাউজবোট চলাচল করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তা না হলে টাঙ্গুয়ার হাওরের একসময় অস্তিত্ব থাকবে না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, এবছর হাউজবোটগুলো যাতে অবাধে হাওরে পর্যটকদের নিয়ে চলাফেরা করতে না পেরে সেজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।