চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডা. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা অভিযোগ
মোমিনুল ইসলাম মোমিন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ক্ষোভে সড়ক দূর্ঘটনায় এক আহত সাংবাদিককে অপচিকিৎসা ও হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডা. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে৷ অগ্রিম ১০ হাজার টাকা নেয়ার পরেও চিকিৎসা না দেয়া ও টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি ও হুমকি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত সাংবাদিক হাসান আলী ডলার (৪৫) থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সাংবাদিক হাসান আলী ডলার, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক দৈনিক আমাদের রাজশাহী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং চাঁপাই কন্ঠ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক৷ সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তিনি বাসায় শয্যাশায়ী আছেন এবং রাজশাহীর ইসলামিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অভিযোগের অনুলিপি,আহত সাংবাদিক ও তার পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা সূত্রে জানা যায়, পেশাগত কাজ থেকে গত ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে বাসায় ফেরার পথে চাঁপাই-পলশা গ্রামে মোটরসাইকেলে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন সাংবাদিক হাসান আলী ডলার৷ পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের জারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। পরে সেখানে এক্স-রে করে তার ফি ও চিকিৎসকের ফি নেয়া হলেও এক্স-রে রিপোর্ট দেয়া হয়নি। চিকিৎসা দেয়ার নাম করে আরও ১০ হাজার টাকা নেয় ডা. ইসমাইল হোসেন অভিযোগ দেন ও দাবি করেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সাংবাদিক হাসান আলী।
সাংবাদিক হাসান আলী ডলার অভিযোগ করে বলেন,সেই রাতে তাৎক্ষণিকভাবে আমার পায়ে ড্রিল করা হয়। এসময় ডা.ইসমাইল বাসায় চলে যেতে বলেন,পরদিন তার লোক বাসায় গিয়ে পায়ে টানা দিতে যাবে বলে জানায়। কিন্তু পরদিন তার লোককে অনেকবার ফোন দিলেও বাসায় যায়নি। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহীর ইসলামিক হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, পায়ে ড্রিল করা মারাত্মক ভুল হয়েছে। এর কারনে আমার পা নষ্ট হয়ে যেতে পারত তবে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত পারি দেওয়াটাই বেটার বলেন রাজশাহীর বিশেষক ও চিকিৎসকরা।
এদিকে ভুক্তভোগী ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন,পেশাগত কাজের সূত্রে ডা. ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। অগ্রিম টাকা নিয়ে চিকিৎসা না দেয়া,ম্যাক্স হাসপাতালের সামনের সরকারি গাছ কাটাসহ বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করি। এরই সূত্র ধরে সে (ডা.ইসমাইল হোসেন) আমার পা নষ্ট করতে ভুল চিকিৎসা দিয়েছে। এমনকি অগ্রিম নেয়া টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার জামায়াত-শিবির ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেছে৷ সে নিজেকে চিকিৎসক নয়,জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার মনে করে রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। বিষয়টি নিয়ে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছি রয়েছি যেকোনো মুহূর্তে আমার বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে প্রতিষ্ঠিত জামায়াত নেতা ও শিবিরের সাবেক ক্যাডার। আওয়ামীলীগের সময়ে এসেও একজন জামায়াত নেতা চিকিৎসকের এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি মেনে নেয়ার মতো নয় তদন্তক্রমে জরুরীভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে জেলার সাংবাদিকবৃন্দ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে একমত পোষণ জানিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন।
ডা.ইসমাইল হোসেন এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, থানায় অভিযোগ হয়েছে,সেখানেই কথা বলব। হাসান আলী ডলার একজন চাঁদাবাজ সাংবাদিক এর আগে আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করেছেন এবং করিয়েছেন তাকে সঠিক আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে যতটুকু সম্ভব সাধ্যমত তাকে আমার পেশাদার দায়িত্ব থেকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। তাই টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই কোনভাবেই আসে না।
এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডা.মাহমুদুর রশীদ বলেন,তার ব্যক্তিগত চেম্বারে এমন কোন ঘটনা ঘটলে আমাদের কোন করনীয় নেই। তবে সরকারি হাসপাতালে এমন কোন ঘটনার খবর আমার জানা নেই। এমন অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এবিষয়ে আমরা থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।