চট্টগ্রাম: গ্রীষ্মের খরতাপে
পানিবাহিত রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
মাসুদ পারভেজ
চট্টগ্রাম: গ্রীষ্মের খরতাপে নগরে বেড়েছে উষ্ণতা। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী।
গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল রোগী ভর্তি হয় ৫৬ জন, ১৪ এপ্রিল ৩৯ জন, ১৩ এপ্রিল ৩২ জন, ১২ এপ্রিল ৩৫ জন, ১১ এপ্রিল ৩২ জন, ১০ এপ্রিল ৪১ জন, ৯ এপ্রিল ৩৯ জন, ৮ এপ্রিল ৩৬ জন, ৭ এপ্রিল ৪২ জন, ৬ এপ্রিল ৩৭ জন, ৫ এপ্রিল ৪০ জন, ৪ এপ্রিল ৪২ জন, ৩ এপ্রিল ২৬ জন, ২ এপ্রিল ৩১ জন ও ১ এপ্রিল ৩৬ জন।
ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ১৬ এপ্রিল ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৬৬ জন রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া ১৫ এপ্রিল ৭১ জন, ১৪ এপ্রিল ভর্তি হয় ৬৭ জন, ১২ এপ্রিল ৫২ জন এবং ১০ এপ্রিল ভর্তি হয় ৪১ জন।
চট্টগ্রাম জেলায়ও বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ উপজেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ২২৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পটিয়া উপজেলায় ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে আনোয়ারায় ২৫ জন, বোয়ালখালীতে ২৪ জন, চন্দনাইশে ১৮ জন, বাঁশখালীতে ২১ জন, লোহাগাড়ায় ১১ জন, সাতকানিয়ায় ৮ জন, সীতাকুণ্ডে ৯ জন, মীরসরাইয়ে ২০ জন, হাটহাজারীতে ১৪ জন, রাউজানে ৪ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৮ জন, ফটিকছড়িতে ৮ জন, সন্দ্বীপে ৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে কর্ণফুলী উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড তাপদাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীরে অতিমাত্রায় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যার কারণে প্রাণহানি হতে পারে। তাই পানিবাহিত এ রোগ নিয়ে সতর্ক থাকা, লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বিআইটিআইডি’র মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলছেন, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত (ব্যাকটেরিয়াজনিত) রোগ। পানির কারণেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ–বয়স্ক কমবেশি সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এসময় গরম পড়লে খোলা জায়গায় বিক্রি করা ঠাণ্ডা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরমর্শ দেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডায়রিয়া নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। আমরা সচেতনতার ওপর বেশি জোর দিয়ে আসছি। প্রস্তুত আছে ২৮৪ জনের চিকিৎসক টিম। তাছাড়া সচেতনতা বাড়াতে উপজেলায় প্রচার প্রচারণা চালানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।