নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম জেলায় গত এক বছরে যক্ষ্মার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার কমেছে; কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী সময়ে কার্যক্রমে গতিশীলতার কারণে এই সাফল্য এসেছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বৃহস্পতিবার নগরীর আন্দরকিল্লায় বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এসব তথ্য দেন। শুক্রবার ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’ প্রতিপাদ্য এবারের যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২২ সালে জেলায় ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের বছর যক্ষ্মা রোগী ছিল ২০ হাজার ৮৫৭ জন। সেই হিসেবে এ বছর যক্ষ্মা শনাক্তের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার ৮৬৬ জন, যা আগের থেকে ২৩ শতাংশ কম।
তখন ‘বেশি পরীক্ষার’ কারণে যক্ষ্মা শনাক্তের হার বেড়েছিল বলা হলেও এ বছর ‘কেন কমেছে’, তার ব্যাখ্যা আসেনি অনুষ্ঠানে।
এদিকে ২০২২ সালে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ক্যাটাগরি-১ যক্ষ্মা রোগী ১৪ হাজার ৯৩৩ জন, পুনঃআক্রান্ত রোগী এক হাজার ৫৮ জন ছিল; এর মধ্যে ৬৬৬ জন ছিল শিশু।
আগের বছর জেলায় ক্যাটাগরি-১ রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৮৬৯ জন, পুনঃআক্রান্ত রোগী ছিল ৯৮৮ জন; সে বছর শিশু আক্রান্ত হয়েছিল ৯২৮ জন।
২০২২ সালে শনাক্ত রোগীর মধ্যে ফুসফুস আক্রান্ত যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৫ জন ও ফুসফুস বর্হিভূত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৪৬ জন। আগের বছর ফুসফুস আক্রান্ত রোগী ছিল ১২ হাজার ৯০৩ জন এবং ফুসফুস ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ১৩৫ জন।
২০২০ সালে জেলায় যক্ষ্মা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ১১৬ জন এবং ২০১৯ সালে ছিল ১৯ হাজার ২৯৫ জন।
অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, “নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা ভালো হয়। কোভিড-কালীন যক্ষ্মা কার্যক্রম সাময়িক ব্যাহত হলেও ২০২২ সালে সে অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।
“একারণে এবার সুস্থতার হারও বেশি। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”
অনুষ্ঠানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয়, এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি- যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে।
“দেশের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যক্ষ্মা রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা-সেবা পাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মা রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রীও রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। পরিবারে যক্ষ্মা রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মস্তিস্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যক্ষ্মার সংক্রমণ হতে পারে। এ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
“ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সাথে রক্ত যায়। আমাদের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষ্মা হয় না।”
জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সুমন বড়ূয়া, জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল, বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট (এনটিপি) ডা. বিপ্লব পালিত, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মো. নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফএম জাহিদ ও নাটাব’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সহযোগী সংস্থাসমূহ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।