গাজী হানিফ, সোনাগাজী (ফেনী)
ফেনীর ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর (৭নং ওয়ার্ড) পাটোয়ারী বাড়িতে ইসরাত জাহান উর্মি নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার সীমান্ত মমতাজ মিয়ার হাটে এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনকারীরা দীর্ঘ ৩কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দৌলতপুর পাটোয়ারী মোড়ে (আসামির বাড়ীর সামনে) গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভকারীরা গৃহবধূ উর্মির দেবর রায়হান (২০), ননদ রুনা বেগম (৩০) ও শাশুড়ি জাহানারা বেগম (৪৫) সহ জড়িতদের আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় হত্যার শিকার গৃহবধূ ইসরাত জাহান উর্মি (১৯) সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের (সাবেক ৫নং ওয়ার্ড সুলতানপুর) (বর্তমান ঠিকানা ১নং ওয়ার্ড মজুপুর) গ্রামের কাতার প্রবাসী মোঃ নুরুল আফসার ও মনোয়ারা বেগম দম্পত্তির প্রথম সন্তান। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে ফেনী সদরের ধলিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওর্য়াডের দৌলতপুর পাটোয়ারী বাড়ির আবু আহমদের পূত্র প্রবাসী মিজানুর রহমানের সহিত সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের কিছু দিন যেতে না যেতে গৃহবধূর স্বামী প্রবাস থেকে মা ও ভাইবোনকে দিয়ে উর্মির প্রতি যৌতুকের টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। কোরবানির ঈদের সময় গরু ও নানান উপহার সামগ্রী না পাঠানোর কারণে গৃহবধূর মাকে বেড়াতে গেলে গালমন্দ ও অপমান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
নিহত গৃহবধূর মা মনোয়ারা বেগম, মামা নুরুল হুদা জানান, বিয়ের আগে ও পরে স্বর্ণালংকার নগদ অর্থ ও নানান উপহার সহ প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, তবুও মেয়ের প্রতি তাদের বিদ্রুপ ও নির্যাতন বন্ধ করা যায়নি। উর্মির দেবর সবসময় অনৈতিক প্রস্তাব দেয় ও উর্মিকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়, এগুলো নিয়ে পারিবারিক কলহ জটিল হয়। এর আগে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার গর্ভের সন্তান প্রতিবন্ধী হবে বলে জোরপূর্বক নস্ট করা হয়।
যৌতুক লোভী শাশুড়ী জাহানারা বেগম ননদ রুনা ও দেবর রায়হান ঘটনার দিন ৮/৯/২০২৩ ইং রাত আনুমানিক ১১ টায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ খাটের উপর বিছানা ছাদর দিয়ে ঢেকে রাখে এবং স্থানীয় মেম্বার ও পুলিশকে খবর পাঠায়, রাত সাড়ে ১২টায় স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হুদা নিহত গৃহবধূর মাকে কল দিয়ে জানায় যে আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতের মা সহ আত্মীয় স্বজন সেখানে যাওয়ার পর উর্মিকে খাটের উপর শায়িত অবস্থায় মৃত দেখতে পায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়, বিছানায় প্রস্রাব করা অবস্থায় দেখে, পুলিশ লাশ ঐ অবস্থায় পেয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে বলে জানিয়েছেন মনোয়ারা বেগম।
পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আত্মহত্যার মতো কোন আলামত দেখা যায়নি বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীরা, গৃহবধূর মা এটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল হুদা গৃহবধূ উর্মির মৃতদেহ তার শয়ন কক্ষের খাটের উপর থেকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- গত কোরবানীর ঈদের সময় গরু ও উপহার সামগ্রী না দেওয়ার কারণে দুই বেহাইনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়েছে, গৃহবধূর দেবর রায়হান পড়ালেখা করেনা বখাটেপনা করে।
১৫ ই সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় নিহত গৃহবধূর আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী মমতাজ মিয়ার হাট ও দৌলতপুরে বিক্ষোভ কালে আসামিদের গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন, আসামি গ্রেফতার না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বেলাল জানান গৃহবধূ উর্মিকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়নি, মৃতদেহটি খাটের উপর শায়িত অবস্থায় পেয়েছেন।
ফেনীর মডেল থানার ওসি শহীদুল ইসলাম লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এই বিষয়ে ৩জনকে আসামি করে আত্মহত্যা পরোচনার (৩০৬ ধারায়) একটি মামলা হয়েছে, বিষয়টি হত্যা কি আত্মহত্যা তাহা আমরা তদন্ত করছি, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।