মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- খুলনা জিরো পয়েন্ট এলাকায় কাদাপানিতে একাকার ভোগান্তিতে পদযাত্রীরা। এলাকা ঘুরে দেখা যায় কোথাও বড় বড় গর্ত, তাতে জমে আছে পানি। আবার কোথাও প্যাচপ্যাচে কাদা। ওই কাদাপানি ঠেলে সামনে এগোনো যেকোনো যানবাহনের জন্য বেশ কষ্টকর। সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশা চলছে ঝুঁকি নিয়ে। আর যাঁরা হেঁটে এলাকাটি পার হচ্ছেন, তাঁদের জামাকাপড় কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই চিত্র খুলনার জিরোপয়েন্ট এলাকার। জিরোপয়েন্ট এলাকাটি খুলনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, খুলনা-ফুলতলা মহাসড়ক, খুলনা-রূপসা বাইপাস মহাসড়কের মিলনস্থল হলো এই জিরোপয়েন্ট। বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনা শহরে প্রবেশের প্রধান পথও এটি। পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে এই পথ ব্যবহার করতে হয় পরিবহনগুলোকে। প্রতিদিন এখান দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ ওই স্থানকে ঘিরে ইন্টারসেকশন নির্মাণের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এ কারণে পুরু কংক্রিটের ঢালাই করে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক। ওই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাজ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে, এ কারণে সড়কের বড় একটি অংশ বন্ধ থাকছে। এর আগেও ওই এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল; কিন্তু কাজ করতে গিয়ে এলাকাটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, জিরোপয়েন্টের চারপাশের সড়কের কংক্রিটের ঢালাই চলছে। তা ছাড়া সেখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন। এ কারণে ওই এলাকার অবস্থা কিছুটা নাজুক। সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত বর্ধিত এলাকার মধ্যে পড়েছে এই এলাকা। স্থানীয় লোকজন জানান, বেহাল হওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। খাদে পড়ে ইজিবাইক ও ভ্যান উল্টে যাচ্ছে। মোটরসাইকেল পড়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছেন যাত্রী। মাঝেমধ্যে ভারী যানবাহন গর্তে আটকে যাচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এটি এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন জিরোপয়েন্ট এলাকায় দেখা যায়, সাতক্ষীরার দিকে চলে যাওয়া সড়কের এক পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে ইট ও সুরকি ফেলে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সকালের বৃষ্টিতে তাতে পানি আটকে আছে। সড়কের পাশে রয়েছে কাদা। উত্তরে ফুলতলার দিকে চলে আসা সড়কে বড় গর্ত নেই বটে, তবে প্রায় চার ইঞ্চির মতো পুরু কাদায় ভরা সড়কটি। একই অবস্থা খুলনা নগরের দিকে আসা সড়ক ও রূপসা সেতুর দিকে চলে যাওয়া সড়কের। হাতে ব্যাগ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে জায়গাটি পার হচ্ছিলেন সোনিয়া আক্তার নামের এক নারী। তাঁর বোরকা কাদা মেখে একাকার। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন। শহরের মধ্যে বাস প্রবেশ করবে না বলে জিরোপয়েন্টের ওপারে (সাতক্ষীরা অংশ) নামিয়ে দিয়েছে। এপারে এসে ইজিবাইকে উঠতে হবে। কিন্তু সড়কটুকু পার হতে গিয়েই জামাকাপড় কাদা ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই সড়ক দিয়ে খুলনা ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার দিকে যায় বাস। খুলনা-পাইকগাছা রুটের বাসচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘জায়গাটি এতটাই খারাপ অবস্থা হয়েছে যে যাত্রীরা পার হয়ে গাড়িতে উঠবেন সে অবস্থা নেই। যাত্রীদের যে নামিয়ে দেব, তেমন শুকনা জায়গাও নেই। বেশির ভাগ সময় যাত্রীরা ওই কাদাপানি মাড়িয়ে গাড়িতে ওঠেন। সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিরোপয়েন্ট এলাকার কয়েকজন দোকানদার জানান, কাজ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এক সপ্তাহ কাজ হলে আবার ১৫ দিন কারও খোঁজ পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কাদাপানি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এ কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তাঁরা বলেন, একটু বর্ষা হলেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় এলাকাটি। আবার যখন শুকিয়ে যায়, তখন ভরে যায় ধুলায়। এসব কারণে কেনাবেচা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। খুলনা সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ওই ইন্টারসেকশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ করছে মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কংক্রিটের ঢালাই করা সড়কের মাঝখানে ৩ ফুট ডিভাইডার। বৃত্তাকার অংশ থেকে ফুলতলার দিকে যাওয়া সড়কটির ১৯৮ মিটার, খানজানান আলী সেতু (রূপসা সেতু) দিকে যাওয়া সড়কটির ৪৯ দশমিক ৫ মিটার, সাতক্ষীরার দিকে যাওয়া সড়কটির ১০৮ দশমিক ৫ মিটার এবং খুলনা নগরের দিকে যাওয়া সড়কটির ২৩ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত হবে কংক্রিটের ঢালাই। এর বাইরে জিরো পয়েন্টে ইন্টারসেকশনের গোলচত্বরটি হবে ৭২ মিটার বৃত্তাকার। ভেতর দিয়ে ২১ মিটার প্রশস্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
কাজের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেদায়েতুল্লাহ বলেন, প্রকল্পের কাজের মধ্যে ওজোপাডিকোর কিছু বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। ওই খুঁটি এখনো সরানো হয়নি। এ কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কাদাপানির ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো হাত নেই। তারপরও সেখানে ইট-সুরকি ফেলে মানুষের চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যায়, ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।