মোঃ শামীম হোসেন - খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ- স্যালাইনের অভাবে খুলনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংকট দেখা দিয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফার্মেসিগুলোতে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সংকট কাটলেও বেসরকারি হাসপাতালের রোগীরা তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে। কোম্পানিগুলো স্যালাইন সরবরাহ না করায় এমন হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুই-তিনগুন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ইন্টার ভেনাস (আইভি) স্যালাইন। বিশেষ করে ডেঙ্গু মৌসুমে রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খুলনার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের শরীরে (শিরায়) পুশ করার নরমাল স্যালাইন পাচ্ছে না রোগীরা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফার্মেসিতে স্যালাইন আনতে গেলেও সেখান থেকে ফেরত আসছে। ফলে সময়মতো স্যালাইন নিতে পারছে না রোগী। এতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। যদিও কোনো কোনো ফার্মেসিতে পাওয়া যায়, তবে সেগুলো কিনতে হচ্ছে তিন-চার গুন দাম দিয়ে।
নগরীর ডক্টরস পয়েন্ট হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি সকাল থেকে ঘুরে একটি স্যালাইন কিনতে পেরেছি। হোরাজ মার্কেট, ময়লাপোতা মোড়, মেডিকেলের সামনেসহ কোথাও স্যালাইন পাইনি। পরে গলির মুখের একটি দোকান থেকে ২০০ টাকায় এনএস স্যালাইন কিনেছি। এর বডিরেট মাত্র ৮৭ টাকা। খুলনার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে খুলনায় স্যালাইনের সংকট চলছে। ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন নরমাল স্যালাইন পুশ করার জন্য। কিন্তু রোগীর স্বজনেরা বাইরের ফার্মেসিতে গিয়ে ফেরত আসছেন। কেউ কেউ আবার কিনছেন দ্বিগুন-তিনগুন দাম দিয়ে। একই দাবি করেছেন হেলথ জোন ক্লিনিকের ম্যানেজার জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ছোটখাটো অসুখ নিয়েও যারা ভর্তি হয় তাদেরও দেওয়া লাগে এ স্যালাইন। এর বিকল্প নেই। অথচ রোগীর স্বজনেরা স্যালাইন পাচ্ছে না। খুলনার সব থেকে বড় ওষুধের মার্কেট হেরাজ মার্কেটের দোকানগুলোতেও এই সংকট তীব্র। কেউ কেউ দু-একটি জোগাড় করতে পারলেও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এই স্যালাইনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে খুলনা মেডিকেলের আবাসিক চিকিৎসক সুমন রায় বলেন, এখন ডেঙ্গুর মৌসমু চলছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রক্তের জলীয় অংশ কমে যায় এবং ঘনত্ব বেড়ে যায়। তখন তারল্য ঠিক রাখতে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বেশি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেটি ব্যবহার হয় তাকে এনএস বা নরমাল স্যালাইন বলা হয়। তিনি বলেন, এখন ডেঙ্গু রোগীর চাপ বলেই স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে এমটি নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এত বেশি নয় যে, তাদের জন্য চাহিদা বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হঠাৎ করেই সাপ্লাই দিতে পারছে না। এর কি কারণ জানা নেই। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রায় ২০০ ওষুধের দোকান রয়েছে। বুধবার এসব দোকানে খোঁজ নিয়ে কোনো স্যালাইন পাওয়া যায়নি। কয়েকটি দোকানে স্যালাইন থাকলেও তারা বিক্রি করতে স্বীকার হয়নি। ডুমুরিয়া ফার্মেসির মালিক জাকির হোসেন বলেন, চার পিস এক লিটারের স্যালাইন আছে। দাম পড়বে ২০০ টাকা করে। বেশি দাম নেওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানি দিচ্ছে না। বাজারে স্যালাইন নেই। জরুরি অবস্থার জন্য রেখে দিয়েছি। এজন্য দাম বেশি চাচ্ছি। খুলনায় পাইকারী ওষুধের মার্কেট হেরাজ মার্কেটের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, কোম্পানিগুলো কোনো ধরনের স্যালাইন দিচ্ছে না। যে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য কোম্পানিগুলো এমন সংকট তৈরি করে থাকে। মনে হচ্ছে এবার দাম বাড়াতেই সেই পথ ধরেছে ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, চিকিৎসার জন্য ১০-১২ ধরনের স্যালাইন পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে এনএস, ডিএনএস, ডিএ ৫ ও ১০ সাধারণ চিকিৎসার জন্য। কলেরা রোগীদের জন্য সিএস। শিশুদের জন্য বেবি সোল ও বেবি সোল জুনিয়র, অসমোসোল, এইচএসসহ সব ধরেনের স্যালাইনের সংকট। এ সংকট চলছে গেল দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন সংকট থাকলেও এখন সেটি কমেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে স্যালাইনের ঘাটতি নেই। তিন-চার দিন আগে আমরা চাহিদা মোতাবেক তিন হাজার স্যালাইন পেয়েছি। যে সংকট ছিল আপাতত তা কেটে গেছে।