মোঃ রাসেল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি: কোয়েল পাখি পালন করতে গিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে কোয়েল পাখির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ৫৫ বছরের এক প্রবীণ। তার খামারে প্রতিদিন দুই হাজার ডিম আসে সেখান থেকে প্রতিমাসে ডিম বিক্রি করে আয় করছেন প্রায় ১লাখ টাকা। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা চন্দনপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সুলতানপুর গ্রামের ০৫ ওয়ার্ডের খামারীর মোঃ ইদ্রিস আলী (৫৫) জানান ২০২০সালে কেশবপুর জামাইয়ের বাসা যাই জামাইয়ের কোয়েল পাখি খামার দেখে কয়েক দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে এসে ৩৯৬স্কয়ার ফুট ছাদে জায়গায় ঘর তৈরী করে ২২০০ পিচ কোয়েল পাখির একদিনের বাচ্চা সংগ্রহ করে গড়ে তুলেন খামার। লাভ ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে ৩ হাজার কোয়েল দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেন কোয়েল পাখির ব্যবসা। খামার দেয়ার পরে ঠান্ডার কারণে তার বেশ কিছু পাখি মারা যায়। এরপরও হাল ছাড়েনি ইদ্রিস আলী । অবশেষে খামার দেওয়ার ১বছরে কোয়েলের ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন এই উদ্যোক্তা। পাখির ডিম ও পাখি বিক্রি করে বেশি লাভে রয়েছেন তিনি। খামারে উপার্জিত লাভের অংশ দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠাইছেন প্রায় দশবিঘাকৃষি জমি বন্ধক রেখেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায় ৩৯৬ স্কয়ারফুটের জায়গা নিয়ে ছাঁদের উপরে একটি টিনসেডের ঘর রয়েছে নীলা কোয়েল পাখির খামার নামে।
সেখানে প্রায় ৩ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। তিনি ও তার পরিবারের লোকজন এগুলোর দেখা শুনাকরে যার ফলে তৈরি হয়েছে একটি আয়ের উৎস। প্রতিনিয়ত এ খামার থেকে সংগ্রহ হচ্ছে ২ হাজার ডিম। প্রতি পিস ডিম পাইকারী বিক্রি করছেন ৩টাকা বিশ পয়সা দরে। কোয়েল পাখির খামারটি পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত থাকে। মালিক কে পেয়ে খাবার আশায় ছোটাছুটি করে পাখিগুলো। এছাড়াও খুচরা বিক্রি করার জন্য রয়েছে চন্দনপুর কলেজ মোড়ে নিজের চায়ের দোকান। দোকানে কোয়েল পাখির ডিম, কোয়েল পাখি, বিক্রি করা হয়। খরচ বাদে এতে তার মাসে আয় হচ্ছে দেড় লাখ টাকা।
সফল কোয়েল খামারী ইদ্রিস আলী জানান, ২০২০ সালে ২২০০টি বাচ্চা নিয়ে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেছিলাম। ডিমের চাহিদা এবং মাংসের চাহিদা বেশি। থাকায় পরিবারের সহায়তায় পরবর্তীতে বানিজ্যিক ভাবে কোয়েল খামার গড়ে তুলি। এই খামারে প্রতিদিন পাখির জন্য চার বেলায় ৮০ কেজির মতো খাবার দেয়া লাগে। দিনে ২ বার ও রাতে ২ বার করে মোট ৪ বার স্টাটার ফিড ও কোয়েল ফিড দেই।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার খামারে থাকা ৩ হাজার কোয়েল পাখি আছে একহাজার মতো পুরুষ কোয়েল পাখি আছে দুই এক দিনের মধ্যে পুরুষ পাখি বিক্রয় করে দেবো দুই হাজার মেয়ে পাখি ডিম দেয়। বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছি। অনেকেই আমার খামার ঘুরে দেখছে এবং আমি অনেক যুবককে কোয়েল খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার দেখাদেখি কোয়েল পাখি পালন শুরু করবে বলে আমি আশাবাদী। স্থানীয় বাসিন্দা ইমানুর সরদার নেছার আহমেদ জানান, আমাদের সুলতান পুর গ্রামের ইদ্রিসআলী ভাই। সে ৫৫ বছর বয়স একজন সফল কোয়েল খামারী। চন্দনপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রনজুর রহমান বলেন, ইদ্রিস আলী ভাই আমার প্রতিবেশী আমি অনেক বছর ধরেই দেখছি এই খামার করে তিনি। লাভবান হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এখান থেকে ডিম কিনে নিয়ে খাই। আপনারা যে কেউ চাইলে এই কোয়েল পাখির খামার করতে পারেন এটা লাভজনক একটি খামার। লালন পালনে তেমন বেশি কষ্ট নেই।
কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ফলেট, ভিটামিন-এ,ই,ডি ও কোলস্টেরল সমৃদ্ধ কোয়েল পাখির ডিম। তাই মানবদেহের এসব চাহিদা পূরনে কোয়েল পাখি ডিম অপরিহার্য। আমরা বিশেষ করে অপুষ্টিকর শিশুদের বেশি বেশি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেই।
কলারোয়া উপজেলা(ভারপ্রাপ্ত) প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ইদ্রিস আলী কোয়েল পাখির পালন করে সফল হয়েছেন আপনার মাধ্যমে জানতে পেরে খুশি হলাম তিনি আমাদের সাথে কখনো যোগাযোগ করিনি আমার অফিসে কোয়েল পাখি টিকা সহ বিভিন্ন প্রকারের রোগের ঔষধ প্রদান করে থাকি সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইতে হইলে প্রথমে তাকে রেজিষ্ট্রেশন এর অন্তর্ভুক্ত হইতে হবে, বিদেশ ফেরত অথবা যুবক-যুবতী যারা এই কোয়েল পাখির খামার দিতে চায় তাদের জন্য আমাদের প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে।