মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ– ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সমুদ্রের জেলেরা প্রস্তুত মাছ ধরতে যাবে অপেক্ষায় সরকারি অনুমতির। নদীতে অপেক্ষাকৃত জেলে কয়রা উপজেলার মুনসুর শেখ জানান সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ জেলেপল্লীতে। নদীতে ট্রলার জমা হয়েছে জেলেদের মধ্যে রাতের পর থেকেই শুরু হবে মাছ ধরা। সমুদ্রের আশ পাশ নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায় নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে সাগরে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। বেলা হেলে পড়লেও সূর্যের উত্তাপ তখনো কমেনি। চারদিকে হাতুড়ি-বাটালের শব্দ। আবার কোথাও চলছে ঝালাইয়ের কাজ―যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এমন দৃশ্য খুলনার কপোতাক্ষপারের সমুদ্রগামী জেলেপল্লীগুলোতে।
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ ২রা নভেম্বর দিবাগত রাতে এই জেলেরা দুর্গম সাগরের উদ্দেশ্যে নাও ভাসাবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন দুর্যোগ, মৎস্য আহরণ মৌসুম পিছিয়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত মৎস্য আহরণ নিয়েও দুচিন্তার ছাপ রয়েছে জেলেদের চোখেমুখে। সম্প্রতি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মাহমুদকাটি, হেতামপুর, কাটাখালী, হাবিবনগর, নোয়াকাঠি, রামনাথপুর, কাঠিপাড়ার জেলেপল্লীগুলো ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বোয়ালিয়া গ্রামের জয়দেব বিশ্বাস (৫২) বলেন, সাগরে আগে বছরে দু-একটি দুর্যোগ আসত। আর এখন প্রতি ১৫ দিনে (গোনে) দুই-তিনবার দুর্যোগ আসে। সাগরে যাওয়ার খরচও বেড়েছে। সব কিছু মাথায় রেখেই জেলেরা নৌকা ভাসাবে। একেকটি নৌকায় ১২-১৫ লাখ টাকা খরচ হবে। অন্যান্য বছর জেলেরা অক্টোবরে সাগরে নামত। এবার সেটি বৃদ্ধি হয়েছে। নভেম্বরে যেতে হবে। ফলে একটি গোন বাদ যাবে। অথচ এ সময় ভারতীয় জেলেরা সাগরে দাঁপিয়ে বেড়ায়।
মাঝখানে দেশি জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পরও জেলেরা বাঁচার জন্য সাগরে নামবে। মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা জেলায় ৯৬৮ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরিত হয়। বর্তমানে জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪১ হাজার ৬৪৫ জন। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যান সাড়ে ৩১ হাজার জেলে। প্রতিবছরই এ সংখ্যা বাড়ছে। শুধু পাইকগাছার ১০টি গ্রামের এক হাজার ৪০০ জেলে রয়েছেন। বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় প্রায় তিন লাখ জেলে বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশই ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় সমুদ্র ও উপকূলবর্তী এলাকায় মাছ ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে দুই দশকের তুলনায় সাগরে সাইক্লোন, নিম্নচাপ, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। গেল দুই-তিন বছর বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জেলে নৌকায় ‘ভেসেল ট্র্যাকিং ডিভাইস’ স্থাপনের নিয়মিত মাধ্যমে আবহাওয়া, নৌকার অবস্থান ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলেদের আগাম সতর্ক করা হচ্ছে। শুধু অল্প কিছু জেলে নয়, সমুদ্রগামী সকলের জন্য এই আধুনিক প্রয়োগ জরুরি। কাশিমনগরের সন্দ্বীপ, তকিয়া গ্রামের সামজেদ দপ্তরি জানান, একসময় তারা আশ্বিন মাসে সাগরে যেতেন। তখন ছুরি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির প্রচুর মাছ ধরতেন। কিন্তু এখন ইলিশের অজুহাতে দেরিতে সাগরে যেতে হয়। এতে ছুরি মাছ মিলছে না। আবার ভারতীয় জেলেরা সাগরে এসে অবাধে মাছ ধরছেন। এক গোন (মৌসুম) পরে সাগরে গিয়ে তারা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সমুদ্রগামী জেলেদের ইলিশ অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) না ফেলার জন্য তারা সরকারে কাছে অনুরোধ জানান।