ঈদে অচল বগি সচল করতে ব্যস্ত শ্রমিকরা
মাসুদ পারভেজ
ঈদে অচল বগি সচল করতে ব্যস্ত শ্রমিকরা ছবি: উজ্জ্বল ধর
চট্টগ্রাম: ঈদে নাড়ির টানে ঘরমুখো অতিরিক্ত ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনে প্রস্তত হচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এজন্য অতিরিক্ত বগি প্রস্তত করা হচ্ছে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায়।
নির্ধারিত সময়ে কোচ মেরামত সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার শ্রমিক-কারিগর ও প্রকৌশলীরা। দিন-রাত সমানতালে কাজ করছেন তারা।
এর মধ্যে অর্ধেক কোচ এবং লোকোমোটিভ মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। বাকিগুলো ১৬ এপ্রিলের মধ্যে মেরামত করে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগকে বুঝিয়ে দিবে প্রকৌশল বিভাগ।
সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানায় কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। সেখানে মেরামত হচ্ছে নষ্ট ও অচল বগি।
দম ফেলার ফুরসত নেই কারখানার শ্রমিকদের। জনবল কম থাকায় তিনজনের কাজ করছেন একজনে। কেউ ঠিক করছেন চাকা, আবার কেউ সিট, কেউ বগি রং করতে ব্যস্ত।
জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে পাহাড়তলীতে চলছে ৯০টি কোচ মেরামতের কাজ। মহাসড়কের অনেক জায়গায় দুর্ঘটনা, হয়রানি, যানজট এড়াতে এবং অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ সবার। ফলে ট্রেনমুখী অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে ইতিমধ্যে ৪০টি কোচ রেলওয়ের পাহাড় ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। মেরামতের পর অবশিষ্ট কোচগুলো ঈদের আগে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। এতে করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ৫০ হাজার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। কোচগুলো সচল করা প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে যুক্ত করে অধিক যাত্রী বহন এবং ৩টি স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে। ঈদের ৫ দিন আগে থেকে একটানা ১২দিন চলবে বিশেষ এ ট্রেন সার্ভিস। এ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা ৯০ কোচের মধ্যে এ যাবৎ ৪০ কোচ রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৫০টির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
রেলওয়েতে ঈদ উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। এই রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধুলী, তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী এবং সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। এছাড়া চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস, সিলেট রুটের উদয়ন-পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেসসহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক ট্রেনে বাকি কোচ সংযোজন করা হবে। বিশেষ ট্রেনের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ৩ জোড়া বিশেষ ট্রেন দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও ৩ এবং চাঁদপুর- চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাঁদপুর স্পেশাল-২ ও ৪ চলবে। চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে ময়মনসিংহ স্পেশাল- ৭ ও ৮ চলবে। এই তিন জোড়া ট্রেন ছাড়াও এবার ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে আরও ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে পাহাড়তলী কারখানায় ১৫টি (উপ-কারখানা) শপে মেরামত কাজ চলছে ৯০টি কোচের। এরমধ্যে ব্রডগেজ রেলপথের ৫৯টি এবং মিটার গেজ রেলপথের ৩১টি কোচ রয়েছে। এ জন্য দৈনিক নিয়মিত কাজের সঙ্গে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা করে বেশি শ্রম দিচ্ছেন শ্রমিক-কারিগররা। এ ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে কাজের চাপ থাকায় শুক্রবার ছুটির দিনেও কাজ চলছে কারখানায়। আর অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রমিক-কারিগরদের দেওয়া হচ্ছে ওভারটাইম।
পাহাড়তলী কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় বেশি করে কোচ মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। এ বিভাগে ১ হাজার ৮০০ জন শ্রমিক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে কাজ করছেন ৬৫০ জন। জনবল সংকটের মধ্যেও শ্রমিক কারিগরদের অতিরিক্ত শ্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোচ মেরামত করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ১৫টি সপে কাজ চলছে সমানতালে।
পাহাড়তলী কারখানার কর্মব্যবস্থাপক সৈয়দ মো. আমীর উদ্দিন বলেন, ঈদের চাহিদা মোকাবিলায় স্বাভাবিক আউটরানের চেয়ে বেশি মেরামত কাজ চলছে পাহাড়তলী কারখানায়। জনবল সঙ্কট থাকার পরেও আমরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। মেরামত কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়েছে। বাকি কাজ ১৬ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করা হবে।
সব টিকিট এবার অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অনলাইনে ৭ এপ্রিল মিলবে ১৭ এপ্রিলের টিকিট। একইভাবে ৮ এপ্রিল মিলবে ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল মিলবে ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল মিলবে ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিলে বিক্রি হবে ২১ এপ্রিলের টিকিট। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন বিক্রি হবে ১০-১৪ হাজার টিকিট।