"ইতিহাসের কী নির্মম পরিণতি: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কাঁদছে বিএনপি
এস এম জুলফিকার জুয়েল
স্বৈরাচার এরশাদকে হটাতে তিন জোটের ওই রূপরেখা ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে ঐক্যের মাইলফলক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল ও ওয়ার্কার্স পাটি, জাসদের নেতৃত্বে পাঁচটি বাম দল ১৯৯০ সালের ২১ নভেম্বর যৌথভাবে ওই রূপরেখা ঘোষণা করেছিল। জামায়াত তিনদলীয় জোটে না থাকলেও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। ৬ ডিসেম্বর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করে তার নেতৃত্বে গঠিত 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার'-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এরশাদ বিদায় নেন।
তিন জোটের রূপরেখা সইয়ের সময় পাঁচ দলের পক্ষ থেকে পরবর্তী তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রস্তাব ছিল। তিন জোটের তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ‘রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক আচরণবিধি’ নামে একটি অঙ্গীকারনামাও স্বাক্ষর হয়েছিল। তিন জোট সেটি জনসমক্ষে প্রকাশও করেছিল।
এরশাদের পতনের পরপরই ওই রূপরেখাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে দেয় বিএনপি। প্রথমত তিনজোটের চুক্তি অনুযায়ী স্বৈরাচারের দোসরদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেদিন এম কে আনোয়ার ও কেরামত আলীকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়। দ্বিতীয়ত বিএনপি জামায়াতের সাথে সরকার গঠন করে। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগ দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
অপরদিকে ৯৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের সংগ্রাম এখনো চলছে।
প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করে বি এন পি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় বসে। মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালের ২০শে মার্চ। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং জালিয়াতি করে বিএনপি সরকার। ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে তীব্র এক আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত প্রধান প্রধান সব রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন করে বিএনপি সরকার।
ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনটি কেবল একতরফাই ছিল না, সেটি বেশ সহিংসও ছিল।নির্বাচনের আগের দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ভোটারের মধ্যে বেশিরভাগই ভোট দেননি। নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের কম ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আন্দোলনের মাঠ থেকে সরে যায়নি আওয়ামী লীগ। আন্দোলন তীব্রতর হওয়ায় ৩০শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে সংসদ ভেঙ্গে দেন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ১২ জুন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে জোটগতভাবে সরকার গঠন করে।
আবারও বিএনপি ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে বিচারপতিদের বয়স বাড়ানো সহ নানাবিধ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় এবং নানা রকম জটিলতা তৈরি করে। আইন লঙ্ঘন করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়ে বিএনপি ভ্রান্ত পথে পা দেওয়ার ফলে এলো এক-এগারোর মতো শাসনব্যবস্থা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে উচ্চ আদালত রায় দেন। এর দায়টা কিন্তু বিএনপির কারন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অপব্যবহার বিএনপিই করেছিলো।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচনে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদ রেখে) দুইবার সরকারে ও দুবার বিরোধী দলে থাকা বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জনই শুধু করেনি, তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। এমনকি জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংসতা করে নির্বাচন ঠেকাতে ও ১দিনের গনতন্ত্র কায়েম করতে ব্যর্থ হয়।
আমাদের দেশে সরকার বিরোধী কর্মসূচি মানেই সহিংস আন্দোলন। বিএনপি জামায়াত এদেশে একটা সংস্কৃতি দাঁড় করিয়েছে তা হলো সরকারকে রাজপথের সহিংস লড়াইয়ের মাধ্যমেই হটাতে হবে। সরকারে থাকলে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির এত নাটক সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে পেতে বিএনপি আজ মরিয়া। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। যারা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে তারাই আগামীতে ক্ষমতায় যাবে। আর বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জনগণ মনে করে সরকার পরিবর্তন হলে তাদের কোনো উপকার হবে না।
বিএনপি আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে সে ব্যবস্থা প্রবর্তন হলে কি সরকার গঠন করতে পারবে লন্ডনে বসে দল চালানো তারেক জিয়া। ভোট দেবে জনগণ। জনগণের জন্য রাজনীতি করলে জনগণই নির্বাচিত করবে। বিশেষ কোনো সরস্থার দরকার হয়না। আর আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়ে দিয়েছে যে শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। ইতিহাসের কী নির্মম পরিণতি: জনগনের ভোটের প্রতি বিশ্বাস না রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য কাঁদছে বিএনপি।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু এস এম জুলফিকার জুয়েল প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি ফকিরহাট সাংবাদিক ইউনিয়ন