একটা প্রশ্ন আমি প্রায়শই পেয়ে থাকি, বা অনেক বেশি শুনি, আইন নিয়ে পড়লে বা উকালতিতে গেলে নাকি মিথ্যা বলতে হয়, সততা নিয়ে চলা যায় না এমন। আসলেই কি তাই? আইন কি আসলেই মিথ্যা শেখায়?
না বরং আইন নিজেই সততার শিক্ষা দেয়।
সততা সব পেশাতেই ধরে রাখা সম্ভব। একটা কথা ভেবে দেখুন তো! যদি কোনো পেশায় সততা ধরে না রেখে সকলেই খারাপ হয় তাহলে কি সে পেশা পৃথিবীতে দীর্ঘস্থায়ীত্ব পায়? হাজার জনের মধ্যে একজন ব্যক্তিও যদি সে পেশায় তার সততা ধরে রাখে তবে সেটাই মহৎ বিষয়।
উকালতিও সেরকমই। এখানে সততাকে নিজেকেই আকরে ধরতে হয়, নিজের নফসের বিরুদ্ধে নিজেকেই যুদ্ধ করতে হয়। যদি এ পেশায় সততা ধরে রাখা না যেত তাহলে এ পেশা সে কবেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত। কিন্তু যায় নি তো তাই না? যায় নি মানে এ পেশাতেও সততা আছে, আছে মানবতার অনেক ফেরি ওয়ালা, যারা এই পেশাকে এখনো নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যেতে দেন নি। তার মানে সততা নিয়েই কোর্টে প্রাক্টিস করা সম্ভব।
আমি যখন প্রথম আইন বিষয়ে ভর্তি হই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী এম এইচ সুপন স্যার আমাকে প্রথম দিনই হাতে একটা পানির গ্লাস নিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মিথ্যা আর সত্যের মধ্যে পার্থক্য।
তিনি একটি গ্লাসে অর্ধেক পানি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন বলো তো এই গ্লাসটা কি? বললাম অর্ধেক ভর্তি একটি গ্লাস, স্যার বললো আমি যদি বলি অর্ধেক খালি একটি গ্লাস তাহলে কি মিথ্যা হবে?
আমি বললাম না স্যার,,, স্যার বলেন তার মানে আমরা দুজনই সত্য বলেছি, পার্থক্য শুধু দৃষ্টিভঙ্গির।।
সকলেই বলে উকিলরা মিথ্যা বলে, কিন্তু না, তারা বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে সত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করে যে যার মত করে। সুতরাং উকিল হলেই মিথ্যা বলতে হবে এমন ধারনা ভুল। তবে এটাই সত্যি যে ১০০ জন উকিলের মধ্যে ৯০ জনই হেরে যায় তাদের নফসের কাছে আর তারা জড়িয়ে যায় মিথ্যার মায়াজালে, বাকি ১০ জন কিন্তু সত্যকে নিয়েই লড়াই করে। তার মানে সত্যকে আকরে ধরেও আইনে কাজ করা যায়।
এবার আসুন “ভয় হয় যদি ক্ষয় হয়” এমন একটা প্রবাদ আছে, এর মানে হলো ভয় হয় যদি নফসের কাছে হেরে যাই, তাহলে কি হবে, হ্যা এটা বলা মুসকিল, দুনিয়ার কোনো মানুষই গ্যারান্টি দিতে পারবে না যে সে নফসের ধোকায় পড়বে না, এটা শয়তানের ধোকায় পড়ে হয়ে যায়, তাই তো এত ভয়।।
হ্যা ভয় যদি হয় যে কোর্টে প্রাক্টিস করলে আমি নফসের ধোকায় পড়ে যাবো তাহলে হাতে আরো অনেক অপশন আছে তো আপনার।
কোর্টে প্রাক্টিস করলেন না, আপনি বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতে লিগ্যাল অ্যাডভাইজর হিসেবে কাজ করতে পারবেন, আলহামদুলিল্লাহ অনেক মান সম্মত স্যালারি তাদের।
অপশন আছে JAG এ যাওয়ার, অপশন আছে নিজস্ব চেম্বার দিয়ে আইনি পরামর্শ দাতা হবার, BJS যদিও একটু কঠিন কিন্তু এখানে শুধু আপনার জন্যই দ্বার উন্মুক্ত করে রাখা, শুধু আইনের শিক্ষার্থীর জন্যই এই পদ।
আইন পড়ে শুধু আইনেই কাজ করতে হবে এমন কেনো? এবার আসুন ভিন্ন কিছু করি, আমি পারবো না কোর্টে প্রাক্টিস করতে, আমাকে দিয়ে হবে না এ্যডভকেসি! BJS, JAG, legal Advisor, এসবই আইনের পেশা, ধরেই নিলাম আপনি এখানে আপনার সততা ধরে রাখতে পারবেন না, কিংবা ধরে রাখা কঠিন, সমস্যা কি থাকবো না এই সেক্টরে।
এবার আসুন চোখ খুলুন সামনে তাকান, আপনার জন্য বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে জেনারেল লাইনের সকল চাকুরিতেই জয়েন করার সুবর্ণ সুযোগ। একজন জেনারেল লাইনের শিক্ষার্থী জেনারেল সাবজেক্ট এ পড়ে যে যে চাকুরীর পরীক্ষা দিতে পারবে, BCS, Bank, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর, ইত্যাদি। আপনি আইনে পড়েও সেসকল বিষয়েই অংশ গ্রহন করতে পারবেন, যে সকল বিষয়ে আপনার জেনারেল সাবজেক্ট এ পড়া ভাই, বন্ধু আবেদন করতে পারছে। তাহলে তো তাদের থেকে আপনার কাজের সুযোগ অনেক বেশি তাই-না? অবশ্যই তাদের থেকে আপনি আইনের বিষয়ে কাজ করার সুযোগে কয়েক ধাপ এগিয়ে। তারা কিন্তু চাইলেও legal advisor, JAG, BJS, advocacy ইত্যাদিতে আসতে পারবে না।
সুতরাং হতাশা নয় বরং শপথ নেই, ভয় নয়, আমরাই করবো জয়। আইন পেশায় যে কলঙ্কের দাগ লেগেছে আজ সমাজের চোখে এ দাগ মুচন করতে আমরাই পারি নিজের সততা দিয়ে আইনের সততাকে সমাজের কাছে তুলে ধরতে।
পালটে দিতে যুগ জামানা চাই না অনেকজন,
এক মানুষই আনতে পারে জাতির জাগরন।
সেখানেতো আমরা হাজার হাজার আইনের তরুন ও নবীন শিক্ষার্থী রয়েছি আমরা পারবো ইনশাআল্লাহ।
আইনে পড়ে হতাশা নয়, বরং শপথ নেই নিজেকে সৎ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলার। মিথ্যার বিরুদ্ধে নিজেরা রুখে দাড়ালেই থেমে যাবে এ অবিচার।
মো রকিবুল ইসলাম
আইন বিভাগ ( অধ্যায়নরত)
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি