মোঃ কামাল হোসেন বিশেষ প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইজিবাইক-চার্জার ভ্যানে বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, লোডশেডিং এর অন্যতম প্রধান কারণ নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানে রাতে প্রচুর পরিমানে বিদুৎ প্রয়োজন হয়। যা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার নানা সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিলেও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা। উপজেলা প্রশাসন বা হাইওয়ে পুলিশের কাছে সংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় পুরো উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বর্তমানে কমপক্ষে ১০/১১ হাজারের বেশি ইজিবাইক-চার্জার ভ্যান চলাচল করছে। বিশেষ করে ব্যস্ত শিল্পাঞ্চল নওয়াপাড়া বাজার এলাকায় এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৬/৭ হাজারের মতো। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্যারেজেই নিষিদ্ধ এসব অটো বাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন। অনেক স্থানে চলছে মিটার টেম্পারিং এর মতো ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি গত কয়েক বছরেও।
এমনকি মহাসড়কগুলোতে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, উপজেলা ও হাই ওয়ে পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই রাস্তায় চলছে ইজিবাইক,চার্জার ভ্যান ও অটোরিকশা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। আর প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসেবে উপজেলায় প্রায় ১০/১১ হাজার ইজি বাইক বা ব্যাটারিচালিত ভ্যান, রিকশা চার্জের জন্য প্রতিদিন অন্তত ১৫ মেগাওয়াট এবং মাসে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন গ্যারেজে চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায় সরকার প্রায় ১৫০/২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে ভাড়া অন্যান্য যানের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে মূল শহরে এবং তার বাইরে এখন যাত্রীদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ভ্যান রিকশা। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে গাড়িগুলোতে চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। তারা এই গাড়িগুলো যে গ্যারেজে রাখছেন সে জায়গা থেকেই রাতভর একটি গাড়ির শুধুমাত্র চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দিচ্ছেন। বেশ কয়েকটি এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজে ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যে কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে থাকে। তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পেছনে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা। তবে সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলের মতে, যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা অথবা সরকারের বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অটোরিকশার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা। এবিষয়ে নওয়াপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম আব্দুর রশিদ বলেন, আমি নতুন আসছি আমার কাছে এরকম অবৈধ সংযোগের বিষয়ে কোন তথ্য নেই, আমি খোঁজ খবর নিব, যদি অবৈধ সংযোগের বিষয়ে কোন তথ্য পায় তবে কোঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।